বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বে আবেদনের আংশিক শুনানি শেষে আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
এ দিন শুনানির করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তার সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটের্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘’শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের হাইকোর্টে যে আদেশ সেখানে দুটি প্যারায় জজ সাহেব লিখেছেন, ‘জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাদের ইমেজ নষ্ট এবং রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য এই নাইকো মামলা করা হয়। যেহেতু রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য এই মামলা করা হয়েছে, তাই এখানে লিগ্যাল এভিডেন্স তেমন কিছু নেই। তাই আমরা শেখ হাসিনার মামলা বাতিল করে দিলাম।’ এখন আমাদের বক্তব্য হলো, ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৪০ মিনিটের ব্যবধানে দুটি মামলা দায়ের করে। শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে ৫টা ৫ মিনিটে এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টা ৪৫ মিনিটে মামলা দায়ের করা হয়। একই দিনে ৪০ মিনিটের ব্যবধানের শেখ হাসিনার মামলা যদি এই গ্রাউন্ডে খারিজ করা হয়, তাহলে খালেদা জিয়ার মামলা কেন খারিজ হবে না? এই বিষয়গুলো আজ আমরা আদালতে তুলে ধরেছি।’ তিনি জানান, সোমবার শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় আগামী বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত। এর আগে গত ১৯ মার্চ কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেয়। পরে ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো: শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যু হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
২০০৭ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।