বালিখেকোদের কাছে হারবাং ছড়াখালটি যেন সোনার হরিণ। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে আসলেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না বালিখেকোদের অবৈধ বালি উত্তোলন। উল্টো অভিযান করে একটি মেশিন জব্দ করলে, বালিখেকোরা ২ঘন্টা পর ফের একই জায়গায় ২টি শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে। যা এক প্রকার প্রশাসন ও চলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সামিল। আর এসব অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে ছড়াখালের তীরবর্তী কৃষকদের আবাদী জমি বিলীন হচ্ছে ছড়াখালের গর্ভে। সেই সাথে এসব আবাদী জমি বিলীন হওয়ায় নাব্যতা হারাচ্ছে ছড়াখালটি এবং ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য প্রজনন ব্যবস্থা। সরেজমিন, হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং ৮নং ওয়ার্ড এলাকায় গেলে দেখা যায়, সাবান ঘাটা, সামাজিকপাড়া, কোরবানিয়াঘোনা ও করমমুহুরীপাড়া এলাকার স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্তত ১০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। এক প্রকার বলতে গেলে চাষাবাদ ছাড়াই রাস্তার মধ্যখানে করা যাবে ধানের চাষ। আর এ রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থা হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে বালিখেকোদের নেতৃত্বে উত্তোলনকৃত বালিগুলো বড় বড় ডাম্পার ট্রাক দিয়ে পরিবহন করা। অন্তত ৮/১০টি বড় বড় ডাম্পার ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ গাড়ি বালি পরিবহন করা হয় এ গ্রামীণ সড়কটি দিয়ে। যার কারণে সড়কটি কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এছাড়াও এ অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে বাংলাদেশ সরকারের মেগা প্রজেক্টও ধ্বংস করছে এসব বালিখেকোরা। উত্তর হারবাং ৮নং ওয়ার্ডের দরগাহ গেইট দিয়ে পূর্বপাশে যে সড়কটি আছে তার মধ্যখানে ছড়াখালের উপর দিয়ে রয়েছে একটি ব্রীজ। আর এ ব্রীজের নিচ থেকেই বালিখেকোরা উত্তোলন করে যাচ্ছে বালি। এভাবে অবৈধভাবে ব্রীজের নিচ থেকে বালি উত্তোলন চলতে থাকলে যেকোন মূহুর্তে ব্রীজটি ছড়াখালের উপর ধসে পড়তে পারে। এদিকে, এসব বালি কে বা কারা উত্তোলন করতেছে তা জানতে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, বেলাল উদ্দিন ও আলমগীর নামক ২জন ব্যক্তির নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট এসব বালি উত্তোলন করছেন। বেলাল উদ্দিন দিনে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও রাতে মেতে উঠেন পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বালি উত্তোলনে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে। এমন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে এসময় তারা উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিকে, এসব অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ইউনিয়নে এখন প্রায় বালি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবে আমার অগোচরে উত্তর হারবাংয়ে কে বা কারা বালি উত্তোলন করতেছে তা জেনে শীঘ্রই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানের সাথে অবৈধ বালি উত্তোলনের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, অবৈধভাবে ব্রীজের নিচে থেকে কিংবা সড়ক ব্যবস্থা ধ্বংস করে বালি উত্তোলনের জন্য কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অতিশীঘ্রই সমূহস্থানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।