পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে কারো বাধা সৃষ্টি করা উচিৎ নয়। এই ধরনের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে। গত বুধবার (২৩ আগস্ট) তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় ধরনের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের আগে আরো ভালোভাবে পরিকল্পনার করার জন্য এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।এতে কারো বাধার সৃষ্টি করা উচিৎ হবে না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেনি তারা ফিরতে চায় না; বরং যখনই কোনো বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সাথে দেখা করতেন তারা সবসময়ই তাদের দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তিনি অবশ্য বলেছেন, সরকার সর্বদা একটি ‘মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায়’ প্রত্যাবর্তনের জন্য তার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবে যদিও এটি পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, অবশ্যই ঝুঁকি আছে এবং ক্যাম্পে বন্দুক হামলা ও মাদক পাচারের ঘটনা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিহত ও আহত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ণ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কীভাবে ভাসানচরে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য সেটিকে একটি ভাসমান দ্বীপ বলে বর্ণনা করেছিল তা উল্লেখ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যার ফলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ হয়। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমনের ৬ বছর পর সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে তাদের একীভূত হওয়ার করার জন্য জোর দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক নৃশংস অভিযান শুরু করার ছয় বছর পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের জেনারেলদের জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য সমাধান খুঁজতে মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন বজায় রাখতে আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে রয়ে গেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়, যদি সেটি তাদের জন্য নিরাপদ হয়।’