মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সন্তানের উদ্দেশে উপদেশমালা

হাবিব মুহাম্মাদ
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

লোকমান আ: নবী ছিলেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে ইবনে কাসির রহ:-সহ অধিকাংশ গবেষকদের দাবি তিনি সরাসরি নবী ছিলেন না; বরং আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যপ্রাপ্ত একজন বিশেষ ওলি ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘নিশ্চয়ই আমি লোকমানকে দান করেছি প্রজ্ঞা’ (সূরা লোকমান-১২)। আল্লাহ প্রদত্ত এই প্রজ্ঞা ও জ্ঞানগর্ভ বাণী লোকমান আ: সমাজের মানুষকে শুনাতেন এবং তাদেরকে উপদেশ দিতেন। নিজের সন্তানকে দেয়া কিছু উপদেশ আল্লাহ তায়ালার ভীষণ পছন্দনীয় হওয়ায় তিনি তা কুরআনে তুলে ধরেছেন এবং সূরাটির নামকরণ করেছেন লোকমান। এর মাধ্যমে যেমন মুমিনদেরকে উপদেশমালাগুলো শোনানো উদ্দেশ্য তেমনিভাবে তাতে এই ইঙ্গিতও রয়েছে; সন্তানকে বিশুদ্ধ আকিদা এবং নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া একজন বাবার কর্তব্য। সেই জ্ঞানগর্ভ বাণীতে যেমন আল্লাহর হকের কথা রয়েছে তেমনিভাবে বান্দার হকের কথাও উল্লেখ হয়েছে।
প্রথম উপদেশ : সর্বপ্রথম তিনি সন্তানকে রবের হক সম্পর্কে সচেতন করে বলেন- ‘হে প্রিয় বৎস, তুমি (কখনো) আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক ভয়াবহ জুলুম’ (আয়াত-১৩)। কেননা, অক্ষম সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে আসীন করার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। সব অপরাধ ক্ষমাযোগ্য হলেও শিরক একটি অক্ষমাযোগ্য অপরাধ। এ জন্য মুশরিকদের ঠিকানা চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

দ্বিতীয় উপদেশ : ‘প্রিয় বৎস, যদি কোনো কিছু সরিষার দানা পরিমাণও হয় তা পাথরের ভেতরে থাকুক কিংবা আসমানে বা জমিনে থাকুক; নিশ্চয়ই আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন’ (আয়াত-১৬)। এতে তিনি গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বত্রে খোদাভীতির উপদেশ দিয়েছেন। কেননা, আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন, সব কিছু দেখেন। তাই যেকোনো কথা ও কাজে লক্ষ্য রাখতে হবে নিশ্চয়ই তা লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কিয়ামতের মাঠে তা প্রকাশ করা হবে এবং তার ভালো-মন্দ প্রতিদান দেয়া হবে।
তৃতীয় উপদেশ : ‘প্রিয় পুত্র, নামাজ প্রতিষ্ঠা করো’ (আয়াত-১৭)। ঈমানের পরে সর্বপ্রথম কর্তব্য নামাজ আদায় করা। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। তা ছাড়া নামাজ মুমিনের মেরাজ এবং জান্নাতের চাবিকাঠি। নামাজ হলো আত্মার পরিশুদ্ধি। কেননা, নামাজ সব অন্যায়- অশ্লীল কাজ থেকে বাধা প্রদান করে।
চতুর্থতম উপদেশ : ‘প্রিয় পুত্র, সৎকাজের আদেশ করো এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করো’ (আয়াত-১৭)। একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের বিকল্প নেই। এটিই ছিল সব নবীদের প্রধান দায়িত্ব। বনি ইসরাইলকে অভিশপ্ত করার অন্যতম কারণ তারা পরস্পরকে অসৎকাজ থেকে বারণ করত না। এটি ইসলামের অন্যতম একটি সৌন্দর্য। সততা শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না; বরং তা পরিবার ও সমাজেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
প ম উপদেশ : ‘প্রিয় বৎস, তোমার উপর যে বিপদাপদ পতিত হবে তাতে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই তা বড় হিম্মতের কাজ (আয়াত-১৭)। যেকোনো বিপদে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষভাবে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতে গেলে বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হবে তখন তা সহ্য করো। আর তা যে কেউ পারে না; বরং বাহাদুররাই তা সৎসাহসের সাথে বরদাশত করে।
ষষ্ঠ উপদেশ : ‘প্রিয় বৎস, অহঙ্কারবশত মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে দম্ভ করে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। চলাফেরার মধ্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখো। নিশ্চয়ই সবচেয়ে অপছন্দনীয় আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ’ (আয়াত : ১৮-১৯)। এতে সামাজিক শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। কীভাবে মানুষের সাথে ওঠাবসা করবে, কথা বলবে, তাদের সাথে লেনদেন করবে। বিশেষভাবে অহঙ্কার বর্জন এবং বিনয়ের উপদেশ দিয়েছেন। আত্মগরিমা না দেখানোর, কাউকে হেয় মনে না করার এবং অহঙ্কারীদের মতো উঁচু গলায় কথা না বলার উপদেশ দিয়েছেন। বিনয়, নম্রতা, কোমলতা ও হাসিমুখে কথা বলার উপদেশ দিয়েছেন। কেননা, অহঙ্কার মানুষের মর্যাদা বাড়ায় না; বরং তা আরো কমিয়ে দেয়। যেমন জোর গলায় কথা বলেই বাহাদুর হয়ে যায় না। কেননা, গাধার আওয়াজ অনেক উঁচু হওয়া সত্ত্বেও তার আওয়াজ সবার কাছে অপছন্দনীয়; বরং বিনয় মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। সবার কাছে তাকে প্রিয় করে তোলে। সপ্তম উপদেশ : রবের হক সম্পর্কে লোকমান আ:-এর প্রথম উপদেশের পর তার সাথে আল্লাহ তায়ালা আরো একটি উপদেশ যুক্ত করেছেন। তা হলো- পিতা-মাতার হক। তিনি বলেন- ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার ব্যাপারে জোর নির্দেশ দিয়েছি তুমি আমার প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। কেননা, মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে’ (আয়াত-১৪)। এতে ঈঙ্গিত রয়েছে, রবের হকের পরেই মা-বাবার হকের স্থান। কেননা, মা-বাবা তাকে কষ্ট করে লালন পালন করেছে। বিশেষভাবে মায়ের কষ্টের কথা বলা হয়েছে। মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসব বেদনা সহ্য করেছেন এবং তাকে দুধ পান করিয়েছেন, লালনপালন করিয়েছেন। তাই তাদের সাথে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের সেবাযতœ করতে হবে। এমনকি যদি মা-বাবা তাকে শিরক করতে বলে; তাদের কথা মানা যাবে না ঠিক কিন্তু তাদের সাথে অন্যায় আচরণ করা যাবে না; বরং দুনিয়াতে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে। লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com