প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত সপ্তাহে জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ায় বিশ্ব নেতারা তার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি ভালো চিত্র পেয়েছেন। তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে আমার সরকারের নেতৃত্বে ‘ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ’ বৈঠকে অংশ নিয়ে আমি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে পেরেছি।” স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ২২-২৪ আগস্ট ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ফলাফল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে যান। সম্মেলনে আয়োজক প্রেসিডেন্ট রামাফোসা ছাড়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে ভাষণ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেছেন। তিনি সর্বজনীন শাসনের নামে তাদের ওপর আরোপিত বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য দক্ষিণের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর কষ্ট পেতে রাজি নই।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে পারস্পরিক ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপক্ষীয়তা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। এবং ব্রিকস জোট এই ক্ষেত্রে একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যথাযথভাবে এর ভূমিকা পালন করবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে একনেকে ২০ প্রকল্প অনুমোদন:জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ১৪ হাজার ৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান। একনেকের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভার শুরুতে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে সর্বজনীন পেনশন সুবিধা চালু হয়েছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ব্রিকসে যোগদান করায়ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে আমরা যোগদান করেছি। এর ফলে আমরা ব্রিকসের সদস্য পদ পেতে আরো একধাপ এগিয়ে গেছি। এইসব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়েছি। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে :স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) (২য় সংশোধিত); গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়); জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীল ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প; মেঘনা নদীর ভাঙন হতে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় নলের চরে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ রক্ষার্থে প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন; ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন শুভাঢ্যাখাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা (১ম পর্যায়); চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম (২য় সংশোধিত); বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ; হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক আধুনিকীকরণ; পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক হতে মাদানী এভিনিউ পর্যন্ত সংযোগকারী দুইটি সড়ক উন্নয়ন; সিলেট সড়ক বিভাগাধীন সিলেট (তেলিখাল)-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ (জেড-২০১৩) সড়কের ২৫তম কিলোমিটারে বড়ভাঙা সেতু নির্মাণ। এছাড়া, মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগ এর আওতায় রামেরকান্দা-লাকিরচর (রোহিতপুর বাজার) সংযোগ সড়ক (আর-৮২৩) উন্নয়ন প্রকল্প; এস্টাবলিশমেন্ট অব ফাইভ হান্ড্রেড বেডেড হসপিটাল ও এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এবং জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল, নোয়াখালী (১ম সংশোধন-প্রস্তাবিত); শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২) : দেশের ০৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ (১ম সংশোধন-প্রস্তাবিত); খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ (প্রস্তাবিত ১ম সংশোধন); লিভিং নো ওয়ান বাহাইন্ড : ইমপ্রুভিং স্কিল অ্যান্ড ইকোনোমিক অপরচুনিটিস ফর দ্য ওমেন অ্যান্ড ইয়ুথস ইন কক্সবাজার, বাংলাদেশ; পটুয়াখালী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা; অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩; উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ (১ম সংশোধিত); সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট + ১০% সিম্পল সাইকেল (এইচএসডি ভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত)।