বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে রহমতপুরÑচাঁদপাশা ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে দূর্ভূগে পড়েছে দুই ইউনিয়নসহ ৫ গ্রামের ৫০হাজার মানুষ।শনিবার বড় মীরগঞ্জ ও ছোট মীরগঞ্জ বাজারের মধ্যবর্তি স্থান খানকায়ে সুলতানিয়া নামক মসজিদ সংলগ্ন সড়কসহ অন্তত ৬০ মিটার এলাকাজুড়ে দেবে গেছে। এতে রহমতপুর ইউনিয়নের সাথে ওই সড়ক পথে চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদি, আরজিকালিকাপুরের একাংশ ও সিংহেরকাঠী গ্রামের পূর্ব অংশের কয়েক হাজার মানুষ ও ছোট মীরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসায়ীরা এ সড়ক দিয়ে তাদের দোকানের মালামাল আনা নেয়া করে থাকেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটি দেবে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। বেশ কিছু দিন যাবৎ আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী, ছোট মীরগঞ্জ ও লোহালিয়া গ্রামের নদীর তীরবর্তি এলাকায় প্রবল আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ওই সকল এলাকাতে গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা নদীতে ফেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পার হতে না হতে ভাঙনে ৬০ফুট ইটের সলিং সড়ক নদীর গর্ভে চলে গেছে। স্থানীয়রা বেশ কিছু ভ্যান যোগে সড়কের ইট উঠিয়ে যে যার মত করে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর ও ভবানিপুর গ্রামসহ ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার লোকজন এখন আর ত্রান চায় না। ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। গত এক সপ্তাহে ৫টি বসতঘর,১০টি দোকানপাট,পানের বরজসহ ২০একর ফসলি জমিসহ আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুকিতে রয়েছে মীরগঞ্জ ফেরিঘাটসহ ৫০ টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ফসলি জমি ও বসত ভিটা হারা মানুষেরা দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে। সিংহেরকাঠী গ্রামের বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ঘর নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ায অনত্র জমি কিনে বাড়ি করছি। আমাদের যাতায়াতের রাস্তাটি নদীতে বিলীন হাটে বাজারে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় ৫টি গ্রামের মানুষ দুশ্চিতায় রয়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, বিগত দিনে ৭ বার নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে নদীর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। আবার নদী ভাঙনে কবলে পরেছি। আমরা সরকারি সাহায্য চাই না, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই। রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী এলাকার ইউপি সদস্য জামাল হোসেন পুতুল বলেন, প্রতি বছরই নদী ভাঙনে এলাকা ব্যাপক ক্ষতির সস্মুখীন হয়ে থাকে। ছোট মীরগঞ্জ বাজারটি কয়েকবার সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। তিনি আরো বলেন,দুই ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়রা উপজেলা সদরে আসতে সিমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হবে এবং কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা সদর সাথে সড়ক পথে যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ পোহাতে হবে। চাঁদপাশা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের রফিয়াদি গ্রামসহ ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে সড়কটি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যবসাবানিজ্য ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমান বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান শুভ, এসও মোঃ রাশেদুল ইসলামকে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান শুভ বলেন, আমি জনর্দূভোগ নিজের চোখে দেখেছি। ভাঙন কবলিত এলাকায় সরকারি খাস জমি না থাকাতে স্থানীয়রা যদি জমি দিয়ে সহযোগীতা করেন তা হলে অতি দ্রুত বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।