রাস্তার পাশে দোকানে থরে থরে সাজানো রং বেরংয়ের হাজারো মাস্ক। পুরো দোকান মাস্কে ঘেরা থাকলেও দোকানী সামনের দিকের একটি পার্ট দিয়ে খুব সহজেই দোকানে প্রবেশ করতে পারতো। তবে এক ফুটের মত কাউন্টারের ফাঁকা জায়গা দিয়ে করতো বেচা-কেনা। কিন্তু দোকানী এবং দোকান পুরো বিষয়টি ছিল রহস্যে ঘেরা। রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সরকারী গাড়ীতে করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান। এ সময় পৌরসভার পুরাতন ব্যাংকের মোড় এলাকায় চোখে পড়ে রহস্যে ওই ঘেরা মাস্কের দোকানটির দিকে। ড্রাইভারকে গাড়ী থামাতে বলেন। নেমে এগিয়ে যান মাস্কের দোকানটির দিকে। সঙ্গে সঙ্গে যান দু’জন আনসার সদস্যও। দোকানী ইউএনওকে দেখে বাহিরে বেড়িয়ে আসেন। তাকে জিজ্ঞেস করতেই বলেন মাস্ক ছাড়া অন্য কোন কিছু তিনি বিক্রি করেন না। দোকানীর কথা-বার্তায় সন্দেহ হলে সাথে থাকা এক আনসার সদস্যকে দোকান সার্চ করে দেখতে বলেন ইউএনও। আনসার দোকানে প্রবেশ করতেই দোকানী কৌশলে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। এবার ইউএনও’র সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। খবর দেওয়া হয় থানায়। পরে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ সাব্বির রহমান ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) সঞ্জয় সাহার যৌথ নেতৃত্বে থানা থেকে চলে আসে একে একে কয়েকটি পুলিশ ফোর্স। এরপর থানা পুলিশ ওই দোকানে অভিযান চালায়। দোকান থেকে একে একে উদ্ধার করা নানা জিনিসপত্র এবং উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে এমন অবৈধ ব্যবসা দেখে ইউএনওসহ উপস্থিত সকলের চোখ ছানাবরা হয়ে যায়। উদ্ধার কাজ চলে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। মাস্কের দোকান লাগোয়া কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যায়য়ের ৪র্থ শ্রেনির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমার ছেলে তার বন্ধুদের সাথে গিয়ে ২০ টাকা দিয়ে ওই দোকান থেকে পুকেমন নামের এক ধরণের কার্ড কিনে নিয়ে আসে। যা অনেকটা তাসের আধলে তৈরি। আমি আমার ছেলেকে এটি কি? এবং কি করে? জিজ্ঞাসা করতেই সে আমাকে এটি খেলার নিয়ম শিখিয়ে দেয়। তবে খেলার নিয়মটাও অনেক তাস খেলার মত। ওইদিন থেকে আমি আমার ছেলেকে চোখে চোখে রাখি এবং এর কুফল সম্পর্কে বলি। তখন সে ওই কার্ডগুলো ছিড়ে ফেলে এবং আর কোন দিন কিনবেনা বলেও জানায়। তিনি আরো বলেন, যেহেতু দোকানটি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি সরকারী বিদ্যালয় লাগোয়া তাই আমি বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলি। পাশাপাশি তিনি ইউএনও’র আচমকা এই অভিযানে খুশি হয়েছেন। তবে তিনি ওই দোকানীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এক অভিভাবকের কাছে বিষয়টি শোনে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্ঠা করি। তবে তিনি দুঃখ করে বলেন বিদ্যালয়ের লাগোয়া হওয়া সত্ত্বেও আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কারণ খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় ওই মাস্কের দোকানী মাস্কের আড়ালে অবৈধ সব জিনিসপত্র বিক্রি করতো। তবে তিনি ইউএনও’র এই অভিযানকে স্বাগত জানান। অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ শাস্তি কামনা করেন। তাকে দেখে যেন এই ধরণের কাজ অন্য কেউ করতে না পারে। ইন্সপেক্টর (অপারেশন) সঞ্জয় সাহা বলেন, আমরা দোকান থেকে মালামাল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে একটি সিজার লিষ্ট করে তার বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া করা হবে। ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ সাব্বির রহমান বলেন, মাস্কের দোকানে অভিযান চালিয়ে যে সকল জিনিস আমরা জব্দ করেছি, তা কিশোর গ্যাং তৈরিতে সহায়তা করতো। এখানে মাস্কের আড়ালে যৌন উত্তেজক ঔষধ, মাদক সেবনের সহায়ক জিনিসপত্র, অস্ত্রসহ আরো বেশ কিছু জিনিস বিক্রি করতো। আমরা এগুলোর থানায় নিয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করবো। পরে ঊর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইউএনও মো. আজিজুর রহমান বলেন, আমরা ওই দোকানীকে পুলিশের মাধ্যমে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। যদি পাওয়া যায় তাহলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জমিমানা করা হবে। এছাড়াও উদ্ধার করা মালামাল বিনষ্ট করা হবে। কোন কারণে যদি তাকে পাওয়া না যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় নিয়মিত মামলা হবে এবং জব্দকৃত মালামাল আদালতে প্রেরণ করা হবে।