জরুরি অবস্থা বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ‘অতি উৎসাহী’ হয়ে কোনও কিছু না করার নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। সম্প্রতি ডিএমপি সদর দফতরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন। পরে ডিএমপি কমিশনারের সই করা অপরাধ সভার বিস্তারিত কার্যবিবরণীর এই চিঠি পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপরাধ সভার কার্যবিবরণীতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে— ‘জরুরি অবস্থায় (দাঙ্গা-হাঙ্গামা) ডিউটিতে মোতায়েনকৃত সব অফিসার ফোর্সদের চলমান ডিউটি সংক্রান্ত ব্রিফ একাধিকবার করতে হবে। যাতে সব অফিসার ফোর্স পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা সম্পর্কে অবগত হয়। কর্তব্যরত অবস্থায় অতি উৎসাহী হয়ে কোনও কার্যক্রম করা যাবে না, যাতে করে নেতিবাচক প্রচারণা হয়।’
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ঢালের ব্যবহার বেশি করতে হবে এবং লাঠি চার্জের সময় সতর্কতার সঙ্গে লাঠি চার্জ করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিরেকে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে হবে ও কৌশলী হতে হবে।’ কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘পূর্বানুমতি ব্যতীত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। নিজের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র ওগুলি ফায়ার করে শেষ করার মনোভাব থেকে অফিসার ও ফোর্সকে বের হয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র মাসচারেক বাকি। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরেই রাজধানী ঢাকায় নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। মাস কয়েক আগেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে— এমন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে (যুক্তরাষ্ট্র) নতুন ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অধিকমাত্রায় ধৈর্য ধারণ করে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কারণ, অনেক সময় অতি উৎসাহী কোনও কোনও পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের কর্ম দক্ষতা দেখাতে গিয়ে এমন কার্যক্রম করেন, যাতে গোটা পুলিশ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়া দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পুলিশের সমালোচনা করা হয়। এজন্যই মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা ও আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালনে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা বাহিনীর সদস্য হয়েও পেশাদ্বারিত্বের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রশংসা কুড়ানোর জন্য অনেক কিছু করে থাকেন। অনেকেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় নিজের কর্মদক্ষতা দেখাতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে অনেক কিছু করেন। দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে এমন কিছু করেন, যাতে সাধারণ মানুষ পুলিশকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো সিনিয়ার নেতাকে মাঠিতে ফেলে পেটানোর ঘটনাটিও নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। একজন-দুজন পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তার অপেশাদারিত্ব আচরণের দায়ভার আসে বাহিনীর ওপর। এজন্য কৌশল খাটিয়ে পুলিশকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
ডিএমপির ওই কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নূরুল হক নুরের বাসায় পুলিশের অভিযানের সময় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ সময় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা দক্ষতা ও কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এ জন্যই রাজনৈতিক দলের নেতা বা সদস্যদের গ্রেফতার বা রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কম শক্তি প্রয়োগ করে বুদ্ধি খাঁটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলা হয়েছে। এতে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। ধীরে ধীরে সমালোচনাও কমে আসবে।-বাংলাট্রিবিউন