রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবার আবেদন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করা হয়। গতকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার জাগো নিউজকে জানান, আবেদন করার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, লিভার ও কিডনি সমস্যা আরও জটিল হওয়ায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে তার চিকিৎসকেরা শঙ্কিত। নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে বিএনপি মহাসচিব: চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে মির্জা ফখরুল হাসপাতালে যান।
সেখানে তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। পরে রাত ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হন মির্জা ফখরুল। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত রোববার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল। মাত্র দেড় মাসের মাথায় চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ৯ আগস্ট আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর গত প্রায় এক মাস ধরে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শর্তযুক্ত আরও ছয় মাস বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস শেষ হয়ে যাবে। তাকে আগের মতো আবারও ছয় মাস শর্তযুক্ত কারাদণ্ড স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে বিদেশে তার চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এই দুই শর্তে চলতি বছরের ২৬ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৭ম বারের মতো আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। যা শেষ হবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জরুরিভিত্তিতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। কোনো প্রিজনারকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই।’ কিন্তু কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশসহ বিশ্বে অজস্র নজির রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও কারাবন্দি থাকা অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। তাহলে খালেদ জিয়া কেন নয়?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল হয়। যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সহসভাপতি নূরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল ইসলাম মনি, আব্দুল আজিজ, শফিকুল ইসলাম শফিক, মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ। পরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমার নামে আপনি মানহানি মামলা দিলে দিতে পারেন, আপনার লেখাপড়ায় ঘাটতি আছে। আপনার জানাশোনার ঘাটতি আছে। যে নেত্রী আপনাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন; আপনি যে অবৈধ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনার সেই সরকারপ্রধান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের জুন মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কারাবন্দি থাকাবস্থায় কারাগার থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেছিল, শেখ হাসিনার কানের যে সমস্যা এটার চিকিৎসা বাংলাদেশের হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার চিকিৎসকরা যখন বললেন, তার উন্নত চিকিৎসা দরকার তখন তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে পাঠানো হচ্ছে না কেন? তার চিকিৎসকরা তো প্রতিদিনই বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, তার চোখে সমস্যা, লিভারে সমস্যা, হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা। সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার ওপর এত অসুখ আক্রমণ করেছে। তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গোটা জাতি উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় তার কেন উন্নত চিকিৎসা হবে না পররাষ্ট্রমন্ত্রী?
রিজভী বলেন, রাশিয়ার বিরোধী নেতা এলেক্সিস লাভলিন সেখানকার একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার তাকে কারাদণ্ড দিয়েছিল, তিনি সাইবেরিয়া থেকে মস্কো আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তারকাকাণ্ড স্থগিত রেখে তাকে বার্লিনে পাঠানো হলো উন্নত চিকিৎসার জন্য; এটা কি আপনি জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আজ তো সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (রাশিয়া) এসেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন কর্তৃত্ববাদী দেশে এই ধরনের মানবিক আচরণ করা হয়।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, চীনের নোবেল বিজয়ী লুই জিয়াও বু ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে কারাগারে মারা যান। তার স্ত্রী লি জিয়াওকেও কারারুদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাকে কিন্তু কানাডা পাঠানো হয়েছিল, উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আপনি কি তা জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আপনি জানেন না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের এই মানবিক গুণাবলি থাকবে কেন? যে সরকার খুন গুম করে, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একের পর এক নীলনকশা করে, ধ্বংসযজ্ঞ অবলম্বন করে তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনি তো শুধু চাকরি রক্ষার জন্য। শেখ হাসিনার মন মতো কথা বলেন। কোনো মানবিক, মানবতা আপনার মধ্যে নেই।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আপনি জানেন না বিএনপি কতটা মানবিক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আগে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল। এটা বিএনপির ইতিহাস, মানবতার ইতিহাস, গণতন্ত্রের ইতিহাস। আর যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল করে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন রাতে করে। দিনের বেলা নির্বাচন করতে সাহস পায় না। তারাই তো অমানবিক জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে তিলে তিলে ধ্বংস করার জন্য উন্নত চিকিৎসা হতে দেয় না কারাগারে আটক রাখে। রিজভী আরও বলেন, এ দেশের জনগণ, বিএনপির নেতাকর্মী সবাই উদ্বিগ্ন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছেন নিশ্চয়ই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হবেন। আমরা কার কাছে দাবি জানাব যারা মিথ্যা দিয়ে, অসত্য দিয়ে দেশনেত্রীকে আটক করেছে তাদের কাছে চাইব? উপরে আল্লাহ আছে, নিচে জনগণ। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী জনগণই রাস্তায় নামছে তার জন্য।