বিভিন্ন সময় আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে এমন কিছু কথা বলে ফেলি যেগুলো গিবতের সংজ্ঞায় পড়ে যায়। কথা বলতে বলতে প্রায়ই আমরা নিজেদের অজান্তেই শয়তানের প্ররোচনায় অন্যের দোষ-ত্রুটি বলে ফেলি। স্বাভাবিকভাবে দৃষ্টিপাত করলে এসব কথাকে নিজের কাছে গিবত বলে মনে হবে না। মনে হবে আমরা তার গঠনমূলক সমালোচনা করছি। অথবা মনে হবে তার মধ্যে এই সমস্যাটি রয়েছে। আমরা তার সংশোধনের উদ্দেশ্যে বলছি।
কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়; ইসলাম মৌলিকভাবে এসব কথাকে গর্হিত কথা বলে গণ্য করেছে। গিবতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: ভালো জানেন। তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, সেটিই গিবত। সাহাবিরা আবার প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি, সেটি যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে?
উত্তরে রাসূল সা: বলেন, ‘তুমি যে দোষের কথা বলো, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে আর তুমি যা বলছ। তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার ওপর তুহমত ও বুহতান তথা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ।’ যদি কেউ কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে। ইসলাম অনুযায়ী তাকে ৮০ দোররা (চাবুক) দেয়া হবে। এরা ফাসিক, পাপী, অপরাধী। এদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূলের এ হাদিসে স্পষ্ট যে, কারো অগোচরে তার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা মানেই গিবত। সেটি হোক তার গঠনমূলক সমালোচনা কিংবা সংশোধনের উদ্দেশ্যে। গিবত থেকে বেঁচে থাকতে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদেরকে সতর্ক করে বলেন, ‘… তোমরা কারো গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং তোমরা একে অন্যের গিবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? এটিকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সূরা হুজুরাত-১২)
সুতরাং আমরা কথা বলার সময় খুব সতর্কতার সাথে কথা বলব, যেন আমরা নিজেদের ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় অন্যের দোষ বলে না ফেলি। লেখক : শিক্ষার্থী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি