নয়াপল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল
নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই অভিযোগ করেন তিনি। ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস, বাংলাদেশের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিস্ট, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, আমান উল্লাহ আমানসহ সকল সিনিয়র নেতাদের সাজা প্রদানের প্রতিবাদে ও মিথ্যা-গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশী সাজা বাতিল এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের একদফা দাবিতে’ এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নেতাকর্মীদের সাজা ও মামলার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের তারিখ যতো ঘনিয়ে আসছে ততই তারা (সরকার) বিভিন্ন অজুহাতে সারাদেশে গণতান্ত্রিক কর্মী এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও মামলা দিয়ে আটক করে রাখছে। কারণ কি? কারণ একটাই যে, সামনে নির্বাচন। নির্বাচন থেকে সমস্ত বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে যাতে বিরোধী দলের নেতারা অংশ নিতে না পারেন- সেই কারণে তাদেরকে আটক করে রাখতে হবে।
তরুণদেরকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু এখানে স্লোগান দিলে হবে না। সামনে বেরিয়ে আসতে হবে। গুলি এবং আক্রমণ সবকিছুকে সামনে নিয়ে দেশকে বাঁচাতে চাইলে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে ডাক এসেছে। দেশের কাছ থেকে, সাধারণ মানুষ, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কাছ থেকে ডাক এসেছে। আর কালবিলম্ব না।
এখনই সময় আমাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ভয়াবহ এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে, যে কোন মূল্যে আমরা এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবো না। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই ডিসি, এসপি এবং ইউএনও তাদের মতো করে সাজাচ্ছে। আর নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে যে, যেভাবে পারো এবং যতো পারো বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দাও। তাদেরকে কারাগারে নাও। অনেক নেতা আছেন যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাই মামলাকে ভয় করলে চলবে না। মামলাকে উপেক্ষা করে তথাকথিত ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে অতিক্রম করে আমাদেরকে আজকে জোট বেঁধে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই বছরে বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ কৌতুক কোনটা? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমি এতো ভালো ভালো নির্বাচন করি, আর দেশে বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না। উনি না কি ভালো ভালো নির্বাচন করেন। এই বছরে এটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ কৌতুক। শেখ হাসিনা ভালো নির্বাচন করেন। এই কথা ঘোড়াও বিশ্বাস করে? ঘোড়া শুনলেও হাসে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য আব্দুর রহিম, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকনসহ দলটির অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।