মাজলিসুল মুফাসসিরীনের সম্মেলন আলেম-উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেন
দেশের বিশিষ্ট আলেম-উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেন, মাদক হলো সব অপরাধের মূল। ইসলামে মাদক নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে পারলে দেশের অন্যান্য সব অপরাধ কমে যাবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি দূরীকরণে প্রতিটি মানুষের জন্য ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর সহিহ দীক্ষা পেলে সমাজে কোনো মানুষ খুন বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে না। মাদকের ঘৃণ্য থাবায় নষ্ট হবে না যুবকদের সুন্দর জীবন। দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম-খতিবরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে সমাজে শান্তি রক্ষার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। কোথাও বোমা মেরে, কিছু লোককে হত্যা করে কোনো উগ্রপন্থি ইসলামের নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে এমন নির্দেশনা ইসলামের কোথাও নেই। তারপরও জঙ্গিবাদ দমনে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিপর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের সম্মেলনে “মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে করণীয়” শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এইসব কথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলামা আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা অধ্যাপক নূরুল আমীনের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। সম্মেলনে প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আল্লামা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগির মহিউদ্দিন, তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারী ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা মোশতাক ফয়েজী, মাওলানা ফজলুল করিম (ভোলা), সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট জালাল উদ্দীন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ড. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার, মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ পীর, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মাওলানা ইসহাক আল মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, হাফেজ মাওলানা লুতফর রহমান, ড. সাইয়্যেদ আবু নোমান, মাওলানা আব্দুস সালাম মাদানী (সিলেট), মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমাদ, মাওলানা নাসির উদ্দীন হেলালী, মুহাদ্দিস মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার (সিলেট), মাওলানা আব্দুল মান্নান আনসারী, হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান (বরিশাল), অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ফরিদপুর), মাওলানা মুজিবুর রহমান (রংপুর), মাওলানা ইসমাইল আলম হাসানী (রাজশাহী), মাওলানা মোল্লা নাজিম উদ্দীন, মাওলানা ইব্রাহিম খলিল মুজাহিদ (কুষ্টিয়া), মাওলানা শরিফুল ইসলাম বেলালী, হাফেজ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক (খুলনা), মোল্লা নাজিম উদ্দীন, মাওলানা রুহুল আমিন (রাজশাহী)’সহ দুইশতাধিক দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, সমাজের অবক্ষয়ের যে ধারা চলছে তা দেশবরণ্য আলেম-উলামাগণ তাদের বক্তব্যে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। ১৯ শতকে শক্রকে মারার জন্য অস্ত্র তৈরী হলো আর মানুষের বিবেককে ধ্বংস করার জন্য মাদককে ছড়িয়ে দেয়া হলো। যাতে করে মাদকাসক্ত ব্যক্তি দিয়ে সহজে বিকেক নষ্ট করে অস্ত্রের অপব্যবহার করা যায়। আজকাল সম্পদশালীদের সম্পদ আদান-প্রদানের মাধ্যম হচ্ছে মাদক। আমাদেরকে আমাদের সন্তান ও সমাজকে মাদক মুক্ত থাকার জন্য সর্তক ও সাবধান হতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে সমাজের মানুষের কাজে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম সার্বজনীন ধর্ম, ইসলামের সাথে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নাই এবং সমর্থনও করে না কারণ ইসলামে মাদক ও অন্যায়ভাবে হত্যা নিষিদ্ধ। ইসলাম মানুষের কল্যাণে এসছে।
আল্লামা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দীন জাফরী বলেন, দেশের আলেমগণ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ঐক্যমত হয়েছে এটাকে সাধুবাদ জানায়। ইসলাম মাধ্যমপন্থার ধর্ম। মানুষকে আল্লাহ পথে ডাকতে হবে কৌশল ও হিকমাত সহকারে। ইসলাম চরমপন্থা সমর্থন করে না। কোন মুসলিম চরমপন্থা অবলম্বন করতে পারে না। আমাদের প্রিয় মুফাসসির আল্লামা সাঈদী চলে গেছেন। মহান আল্লাহ তাঁর অবদানকে কবুল করুন এবং আল্লামা সাঈদীকে জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্থান দান করুন।
অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, ধর্মীয় আচার মেনে চললে দেশে মাদক ও সন্ত্রাস হ্রাস পাবে। মাদক ও সন্ত্রাস রোধে ইসলামী আইনের বিকল্প নেই। মাদক বিরোধী আইনের নামে মাদককে আস্কারা দিলে দেশ ধ্বংসের অতল গহবরে তলিয়ে যাবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। এভাবে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ মাদকের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মাদকের থাবায় নাস্তানাবুদ একটি প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, মাদক এক নীরব ঘাতক। ধর্ষণ, খুন, চুরি, ছিনতাই, বিবাহবিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে মাদক। পাড়া-মহল্লায় উঠতি বয়সের কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো যে অপরাধমূলক কাজ করছে তার পেছনেও রয়েছে এই মাদক। সমাজে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বেড়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে মাদক। ইসলামে মাদক নিষিদ্ধ। বর্তমানে শুধু ছেলেরাই মাদক সেবন করছে তেমনটি নয়। গবেষণা বলছে, মাদকসেবীদের ১৬ শতাংশ নারী।
সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, ইসলামে মাদক সেবন নিষিদ্ধ। ইসলামে অন্য যেসব নিষিদ্ধ বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো থেকে ব্যক্তি চাইলেই সহজে বিরত থাকতে পারে। অর্থাৎ, ইচ্ছা করলে এসব অপরাধ থেকে সরে থাকা যায়। কিন্তু মাদক গ্রহণ এমন এক অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না; বরং মাদকসেবী নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে এ থেকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
আলেম-উলামাগণ বলেন, জঙ্গি মানে যারা আকস্মিকভাবে কারও ওপর হামলে পড়ে। জনজীবনকে বিষিয়ে তোলে, উগ্রতার মাধ্যমে এক ভয়াল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়। যাদেরকে সবাই বিপজ্জনক বলে মনে করে। এদের মধ্যে কোনো গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে লড়াই করে, আবার কোনো গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালের কোনো দেশি-বিদেশি অপশক্তির হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহৃত হয়। জঙ্গিদের সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম জবরদস্তিমূলক প্রতিষ্ঠা করার বিষয় নয়, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবদ্দশায় তিনি এটি করেননি, এর শিক্ষাও দেননি উম্মতকে। অকারণে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।