বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ভারত ছিল না বলে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ কারণেই কি অর্ধেকের বেশি গ্যালারি ফাঁকা রেখে টুর্নামেন্ট শুরু করতে হলো? আজ রোববার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাইয়ে মাঠে নামছে রোহিত শর্মার দল।
বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি। এই ম্যাচের আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলে শুভমন গিলকে নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। গিলের ডেঙ্গু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের আগে কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন যে তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।সংবাদ সম্মেলনে ভারতের ক্রিকেট দলের কোচ বলেন, ‘তাকে আগের দিনের চেয়ে প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক, মেডিক্যাল টিম তাকে নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’ তবে শেষ পর্যন্ত যদি শুভমন গিল না খেলেন, তাহলে কে ওপেন করবেন রোহিত শর্মার সাথে? কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘এটা ভারতের জন্য একটা বড় ধাক্কাই হতে যাচ্ছে।’ ৩৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেই গিল নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৯টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। শুভমন গিলেন ওয়ানডে গড় এখন ৬৬, স্ট্রাইক রেট ১০২।
নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, শুভমন গিল এই মুহূর্তে ভারতের ব্যাটিংয়ের কেন্দ্রে আছেন। ‘তিনি ধারাবাহিক এবং লম্বা ইনিংস খেলেন, যে কারণে অনেকে ব্যাট করার সুযোগই পাননি। অন্যরা কিছুটা প্রস্তুতির অভাবে ভুগছে,’ বলেন ফাহিম। তার মতে, একটা দল অনেক সময় অবচেতনভাবে নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। তিনি না থাকলে একটা অস্বস্তি কাজ করবে।
শুভমন গিল শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে, ‘একটা মিস হবে’ এটা নিশ্চিত, বলছেন ফাহিম। ভারতের ব্যাটিং অর্ডার দীর্ঘদিন বিরাট কোহলি নির্ভর ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে শুভমন গিল সেই নির্ভরতা থেকে বের করে এনেছেন। এখন ভারতের হাতে দু’টি অপশন বলছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, এক কেএল রাহুল, দুই ইশান কিশান, দু’জনই মিডল অর্ডার ও টপ অর্ডারে ব্যাট করার সক্ষমতা রাখেন। যেহেতু কেএল রাহুল ভারতের হয়ে আগে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছেন তার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। ইশান কিশান মিডল অর্ডারে হাল ধরতে পেরেছেন সম্প্রতি ভারতের ম্যানেজমেন্ট তাকে সেখানেই রাখার সম্ভাবনা বেশি বলছেন ফাহিম।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর বিশ্লেষণে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন বলেন, শুভমন গিলের মতো একজন ব্যাটারের না থাকা যেকোনো সময়ই একটা খারাপ খবর। তিনি ও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক ওয়াসিম জাফর দু’জনই মনে করেন, ভারতের হাতে আপাতত যথেষ্ট অপশন আছে রোহিতের সাথে ওপেন করানোর মতো।
কোহলি কি পারবেন? বিরাট কোহলি একজন ক্রিকেটার যাকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ব্যাটিং গ্রেট সচিন টেন্ডুলকারের সাথে তুলনা করা হয়।
যদিও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সচিন টেন্ডুলকারের পর্যায়ে যেতে পারেননি এখনো, কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে আর দু’টি সেঞ্চুরি করলেই কোহলির ও সচিনের ওয়ানডে শতক সংখ্যা হবে সমান- ৪৯টি। নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘এই দলে ভিরাটের বাইরে আরো ব্যাটার আছেন যাদের ওপরও ভারত নির্ভর করবে।’ এখানে তিনি টেন্ডুলকারকে এগিয়ে রাখতে চান কারণ তিনি যতদিন খেলেছেন ততদিনই সেরা ব্যাটার ছিলেন। সচিন টেন্ডুলকারের নামেই বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের অধিকাংশ রেকর্ড লেখা রয়েছে, তিনি ওয়ানডে বিশ্বকাপেরও সবচেয়ে বেশি রানের মালিক, ৪৫ ম্যাচে ৫৭ গড়ে ২২৭৮ রান তুলেছেন তিনি, ৬টি শতক হাঁকিয়েছেন।
কোহলি এখনো পর্যন্ত ২৬ ম্যাচে ১০৩০ রান তুলেছেন, শতক ২টি। তবে বিরাটের জন্য নিশ্চিতভাবেই একটা বিশেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। এবারের এশিয়া কাপেও তিনি প্রমাণ দিয়েছেন ফর্মে থাকলে কতোটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারেন তিনি প্রতিপক্ষের জন্য। এই বছর বিরাট কোহলি ১৬ ম্যাচ খেলে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, ২০২৩ সালের রেকর্ড অনুযায়ী ভারতের শীর্ষ পাঁচজন রান সংগ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটও তারই। ওদিকে গত শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দীর্ঘসময় ম্যাচে ছিল নেদারল্যান্ডস, এটা নিয়েও আলোচনা চলছে।
চমকের নাম নেদারল্যান্ডস: নেদারল্যান্ডস মাঝে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার সুযোপ পায়নি। এবার ফিরে এসে প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছে দলটি। পাকিস্তানকে ২৮৬ রানে আটকে দিয়ে দলটি সেটা একটা পর্যায় পর্যন্ত দারুণ এগোচ্ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার কাছে হার মানল নেদারল্যান্ডস। এই হার থেকে দলটি দারুণ শিক্ষা নেবে বলেই মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি মনে করেন, ‘নেদারল্যান্ডস হয়তো এই বিশ্বকাপে এসেছে একটি বা দু’টি জয় তুলে নিতে। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা চেষ্টা করবে ম্যাচ জয়ের।’ গত শুক্রবার ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বাস ডি লিডি একাই চার উইকেট নিয়েছেন এবং ব্যাট হাতে ৬৭ রান নিয়েছেন। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া মনে করেন, সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বাস ডি লিডি। তিনি উইকেটে থাকা অবস্থায় মনে হচ্ছিল নেদারল্যান্ডসের জয় সম্ভব। কিন্তু পাকিস্তানের হারিস রওফের গতির সামনে নেদারল্যান্ডস সুবিধা করতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। সূত্র : বিবিসি