আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে। ফলে দলটির এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের মূল স্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ও উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক।
গতকাল শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ইশতেহার উপ-কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘গ্রাম হবে শহর’ স্লোগান ছিল উল্লেখ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মূল স্লোগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার কমিটি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরাট আঘাত এসেছে। সে কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। অর্থনীতি টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে উল্লেখ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও ৬ ভাগের মতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট ভাগ, সেটি সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠতে আরও কিছু সময় লাগবে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ইশতেহার দিয়ে আসছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অতীতে আমরা কী কী করেছি, আমাদের কী কী অর্জন রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হয়। তার আলোকে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন করি।
এবারের নির্বাচনি স্লোগানের মূল প্রতিপাদ্যে যুবসমাজের কর্মসংস্থান থাকবে বলেও জানিয়েছেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, সবাই বলতো- অবকাঠামো নেই, রাস্তাঘাট নেই, এ দেশে শিল্প হবে না। বিদেশিরা আসবে না, বিনিয়োগ করবে না। আমরা আগে অবকাঠামো করেছি, রাস্তাঘাট করেছি। এখন শিল্পায়নের পথে সব বাধা দূর করা হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে শিল্পকারখানা স্থাপন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে দেশে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মানুষের আয় বৃদ্ধি করা। স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল উন্নত জীবনযাপন। উন্নত জীবনযাপনের জন্য উৎপাদন খাতকে বাড়ানো, শিল্প কারখানা গড়ে তোলা। তার জন্য যা করার সবই হয়েছে। শিল্পায়নের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে। দেশের অর্থনীতিতে চাঙা হবে।
গত নির্বাচনে ‘গ্রাম হবে শহর’— এমন প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। রাস্তা পাকা হয়েছে। সব গ্রাম উপজেলা শহরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। স্কুল-কলেজের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে গেছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের আলু-পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় জনগণের ক্ষোভ রয়েছে। এই দামটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি। বিশেষ করে, গরীব মানুষের বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে চালের দাম নি¤œগামী। চাল-গম অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে আমাদের গুদামে এখন বেশি রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ইশতেহারে এসডিজি গোলকে সামনে রেখে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করতে চাই। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন করবো। দারিদ্র কতটুকু নেমে আসবে? মুদ্রাস্ফীতি কততে নিয়ে আসবো—এগুলো বিবেচনা নিয়ে সার্বিক চাঙা অর্থনীতির বিষয়ে আমাদের আগামী ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সাজ্জাদুল হাসান প্রমুখ।