লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা জুড়ে গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর সুপারীর পর্যাপ্ত ফলন হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সুপারীর বাগান রয়েছে। চলতি বছর উৎপাদিত সুপারীর বাজার মূল্য প্রায় ৪০কোটি টাকার বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মান-স্বাদের কারণে এ অঞ্চলের সুপারীর চাহিদা রয়েছে দেশ ও দেশের বাহিরে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে বিস্তীর্ণ সুপারীর বাগান। আবার অনেকে ঘর বাড়ি ছ্ড়াাই শুধুমাত্র কৃষি ফসল হিসেবে সুপারী বাগান করেছেন। এছাড়াও পুরো উপজেলা জুড়ে রাস্তার উভয় পাস জুড়ে দেখা মেলে সুপারী বাগানের। এসব গাছে তাকালেই এখন দেখতে পাওয়া যায় কাঁচা-পাকা সুপারীর বিপুল সমাহার। উপজেলার রায়পুর পৌরসভা, হায়দরগঞ্জ বাজার, রাখালিয়া বাজার, মোল্লার হাট বাজার, খাশেরহাট বাজার, মিরগঞ্জ বাজারসহ স্থানীয় প্রতিটি বাজারেই বিশেষত. হাটের দিন সুপারী ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। এ সব বাজারে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা সুপারী সংগ্রহের জন্য আসেন। এখান থেকে পাইকাররা সুপারী সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানী করে থাকেন। বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- এখানকার সুপারী মৌসুমের সময় তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর একভাগ পাইকাররা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। দ্বিতীয় অংশ স্থানীয়ভাবে শুকিয়ে বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয় এবং তৃতীয় অংশ অফ সিজনে বর্ধিত মূল্যে বিক্রয়ের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে রঙ্গীন সুপারীতে বাজার সয়লাব হয়ে গেলেও বিগত কয়েক মৌসুমের তুলনায় দাম অনেকটা কম হওয়ায় বাগান-চাষীরা হতাশ। জানা গেছে গত বছর প্রতি পণ (৮০টি) পরিপক্ক মান সম্পন্ন সুপারী ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রয় হলেও এ বছর বিক্রয় হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার হোসেন গাজী সুপারীর দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, সুপারীর দাম বেশি হলে বাগানীরা আগ্রহী হয়ে বাগানের পরিচর্যা করেন। ফলে উৎপাদনও বাড়ে। কিন্তু দাম কম পেলে বাগানীরা বাগান পরিচর্যায় আগ্রহ হারান, এতে উৎপাদনও কমে যায়। বাগান মালিক হাজী হাসানুজ্জামান বলেন সুপারীর দাম কমে গেলে প্রাক মৌসুমে বাগান ও সুপারীর উপর অগ্রিম লগ্নীকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। ফলে পুরা উপজেলাজুড়ে সুপারীর উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর জীবনযাত্রাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা সুপারীর দাম যাতে স্থিতিশীল ও ন্যায্য পর্যায়ে থাকে তা তদারকী করার জন্য কৃষি বিভাগের নিকট দাবী জানান। উপজেলা কৃষি অফিসার তহমিনা খাতুন বলেন, রায়পুরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সুপারীর চাষ হচ্ছে। আমাদের উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বাগান মালিকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেন। মৌসুমের প্রথম অংশে দাম কম হলেও সামনের দিকে দাম আরো বাড়তে পারে।