কিশোর বয়স থেকে মধু চাষ করে আসছেন হাসান মিয়া। মৌমাছির সঙ্গে দারুণ সখ্য তাঁর। মধু সংগ্রহ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। করেছেন অনেকের ভাগ্য বদল। দুই দশকের বেশি সময় ধরে কৃষিকাজের পাশাপাশি মধু চাষ করে আসছেন তিনি। এ সাফল্যে নিজের নাম ছাপিয়ে হাসান মিয়া এখন পরিচিত ‘মধু চাষি’ হিসেবে। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায়। চারজন শ্রমিক নিয়ে প্রায় কুড়ি দিন আগে শেরপুরের গারো পাহাড়ে এসে মৌবক্সের মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তিনি। হাসান মিয়া(৩৮) একাই নন, বিভিন্ন জেলা থেকে দুই শতাধিক মৌচাষি গারো পাহাড়ে এসেছেন মধু সংগ্রহ করতে। হাসান মিয়া জানান, ১৮৬ মৌবক্স রয়েছে তাঁর। যেখান থেকে সপ্তাহে প্রায় ৭০০ কেজি মধু সংগ্রহ করবেন তিনি। প্রতি বক্সে কমপক্ষে চার কেজি মধু পাওয়া যাবে। শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার গারো পাহাড় ঘেরা বনে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ বেশ সাফল্য এনে দিচ্ছে। সীমান্তের প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় বছরব্যাপী মধু সংগ্রহ করেন দেশের বিভিন্ন জেলার মৌচাষিরা। তাদের দেখে মৌচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এলাকার মানুষ। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সভাপতি রফিক মজিদ বলেন, মৌচাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হাজারো তরুণের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরেজমিন জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় রয়েছে প্রাকৃতিক গাছগাছালি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে স্থানীয় বন বিভাগ নানা ধরনের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে। এখন সারা বছর পাহাড়ে অনেক বৃক্ষ ছেয়ে থাকে ফুলে ফুলে। এ ছাড়া ভারত সীমান্তেও রয়েছে ফুল ও ফলের বাগান। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের ঢালে সারি সারি মৌবক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নিচ্ছেন শিক্ষিত যুবকরা। অল্প শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন মধু চাষে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন শহিদুল, জিয়াউর, সাইদুলসহ কয়েকজন। তারা জানান, দুই সপ্তাহ আগে মৌবক্স নিয়ে এসেছেন তারা। পাহাড়ে মধু সংগ্রহ শেষে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করবেন। সরিষা ফুল শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকবেন তারা। এখান থেকেই ২০ মণ মধু সংগ্রহ করবেন। তাদের ভাষ্য, সপ্তাহে একবার বক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন তারা। প্রতিবার একটি বক্স থেকে প্রায় চার কেজি মধু পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু এখান থেকেই ৬০০-৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অনেক সময় এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়। তবে সরিষা ফুলের মধুর দাম কিছুটা কম। মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের ফুল জন্মায় আর সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই বন মধু চাষের উপযুক্ত স্থান। এখানে কেউ মৌচাষ করে মধু উৎপাদন করতে চাইলে বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা মৌচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। গারো পাহাড়ের মৌচাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।