দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সরকারবিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট। জনগণের করের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনের নামে ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলন (কাউন্সিল) হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রন্টের কনভেনর জয়নুল আবেদীন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন বাতিল এবং তৃতীয় বারের মতো জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার প্রতিবাদে আগামী ১৪ জানুয়ারি সারাদেশের আইনজীবী সমিতিতে কালো পতাকা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এসময়। লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, গত ৭ তারিখের তথাকথিত নির্বাচনের নামে দলীয় কাউন্সিলে জনগণ তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও উপস্থিত হয়নি। রয়টার্স, বিবিসি, ডয়চে ভেলে বাংলা এবং বিশ্বের বহুল প্রচারিত স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমগুলো ৭ তারিখের কথিত ভোটে ভোটারের উপস্থিতি সর্বোচ্চ ২%-৫% বলে উল্লেখ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি সংসদে যেভাবে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, ঠিক সেভাবেই গত ৭ জানুযারি তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে দেশের জনগণ মনে করে।’ লিখিত বক্তব্যে বিএনপির চেয়াপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৫ হাজারের অধিক রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি এবং সরকারের ফরমায়েশী রায় বাতিলের দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে ডামি এমপি, ডামি প্রধানমন্ত্রী, সমস্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান আজ্ঞাবহ। কিন্তু অনুপস্থিত রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচারভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ভোটাধিকার। গণতন্ত্রের মূল উপাদান জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক এবং তারা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। সংবিধানের ৭ ও ১১-এর নির্যাসও একই। কিন্তু বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের এই সর্বজনীন মতবাদকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে।’
আরো বলা হয়েছে, “আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি যখনই স্বৈরাচারের কবলে পতিত হয়েছে শুধু আইনজীবীরা নয় দেশের সমস্ত পেশাজীবী সমাজ জনগণের ভোটাধিকার পূনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামে শামিল হয়েছে। বর্তমানে তো স্বৈরাচার নয়, একটি দুর্বিনীত, দানবিক, সর্বোচ্চ কর্তৃত্বপরায়ণতা এবং ন্যূনতম সভ্যতা বিবর্জিত একটি ফ্যাসিস্ট সরকারব্যবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, শুধু আইনজীবী নয়, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সংস্কৃতিসেবী, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সংবাদকর্মীসহ সকল পেশাজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাতৃভূমির এই চরম সঙ্কটে আন্দোলন-সংগ্রামকে আরো বেগবান করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। বৃহত্তর রংপুরের কালজয়ী কৃষকনেতা নূর-উল-দীনের ভাষায় বলতে চাই- ‘জাগো বাহে, কুনঠে সবায়’।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মহসীন রশীদ, বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ইউনাইটেড ল’ইয়ারস ফ্রন্ট সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের কনভেনার আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক, কে এম জাবির, ইউএলএফের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, ইউএলএফ সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের কো-কনভেনর মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।