নরসিংদীতে ভোরের কুয়শায় খেটে খাওয়া মানুষ সকালে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। শেষ মুহুর্তে এসে শীতের কুয়াশায় নিম্নাঞ্চলে সবজির চারা ও বীজতলার জমিতে কুয়াশায় চারা গাছের ডগায় ডগায় জল জমে ক্রমেই ঢলে পড়ে গোড়া শক্তিহীন হয়ে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষিজীবি মানুষ দারুন ভাবে হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে থমকে দাঁড়িয়েছে ইরি বোরো চাষ ও নস্ট হচ্ছে সবজি বাগানও। চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বোরো বীজতলা বিবর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার চারা গাছগুলো লালচে আর হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সময় মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা কাটছেনা স্থানীয় কৃষকদের। প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে ইরি বোরো চাষে কৃষকরা বীজতলা থেকে বীজ উত্তোলন করে দিনরাত সেচ পাম্প চালু রেখে এবং চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেলেও এবারের চিত্র একটু ভিন্ন প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার কারণে কৃষকদের খুব একটা মাঠে দেখা যাচ্ছে না। মাধবদী থানার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় ৬০/৬৫ শতাংশ ইরি বোরো বীজতলা বেড়ে উঠতে পারেনি সেই সাথে নস্ট হয়ে যাচ্ছে সবজি বাগানও। কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে হলদে, লালচে বিবর্ণ আকার ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে বীজতলাগুলো। খুব কম সংখ্যক কৃষকদের মাঠে ইরি বোরো রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে যারাই শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করতে যান প্রচ- ঠান্ডার কারণে কিছুক্ষণ রোপণ করার পর হাতে আর কাজ করার মতো অনুভূতি পায়না ফলে তারা মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। অথচ এ মৌসুমে মাঠে মাঠে ইরি বোরো রোপণে কৃষকদের পুরোদমে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। দিন রাত সেচ পাম্পগুলো চালু থাকত। আর এখন সেচ পাম্পগুলো চলছে অনেক হিসেব নিকেশ করে। জমি চাষের দৃশ্য ছিল অহরহ। সকালে বীজতলা থেকে চারা উঠাতে ব্যস্ত থাকত কৃষকরা। সরেজমিনে নরসিংদীর মহিষাশুড়া ইউনিয়নের মাধবদীর বর্দ্দের কান্দা গ্রামে গিয়ে কৃষক রফিক মিয়া, হাবিবুর রহমান, নবী হোসেন, জাকারিয়া সহ আরো কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, “তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর চারা বড় হচ্ছে না। লালচে রং ধরে শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল চারায় ফলন ভালো হবে না। এবার পাঁচ একর জমিতে বোরো আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে মোতাবেক আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি।
কিন্তু দুই দফায় টানা ১০/১২ দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশায় বীজতলার সমস্ত চারা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ওই গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক মোমেন মিয়া জানান, কৃষকরা মাঠে নামছে না। তাই জমির মালিকরাও ইরি বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করছে খুব কম। একারণেই প্রায় সময়েই সেচ পাম্প বন্ধ থাকছে। আগে এই সময়ে দিন রাত সেচ পাম্প খোলা থাকত। এ এলাকার একজন অভিজ্ঞ প্রবীন কৃষক নূরু মিয়া বলেন তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এবং সূর্যের আলো কম থাকায় বীজতলার চারা গাছগুলো খাদ্য সরবরাহ না হওয়ার কারণে প্রথমে হলুদ এবং পরে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া এবং বীজতলায় রাতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমা রেখে সকালে সেই পানি পাল্টে আবার নতুন পানি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কৃষকরা ছত্রাকনাশক অষুধ ব্যবহার করতে পারেন বলে জানান তিনি। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় কৃষকরা বীজতলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং উন্নত দেশ গড়তে গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবি নি¤œ আয়োয়ের মানুষদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া তথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে দায়িত্বরতদের প্রতি নিম্ন আয়ের এসব সাধারণ মানুষের সমস্যা দূরীকরণে দায়িত্বশীল হওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুবিধা বঞ্চিত এসব সাধারণ মহল।