অমর একুশে বইমেলাকে প্রাণের মেলা হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এর আগ সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। পরে পবিত্র আল কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এর পরে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের জাতিসত্ত্বা জাগ্রত হয়, যার পথ ধরে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, এই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখানে এসেছি তা না, যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখনও আমরা এখানে আসতাম। বইমেলার জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তবু এই জায়গার একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন: রাজধানীর শাহবাগে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দেশের বৃহত্তম এ বইমেলা উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগ সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। পরে পবিত্র আল কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এর পর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান পরিবেশন করা হয়। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি তিনি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা: দ্বিতীয় খ-’সহ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হয়েছে। বিভাগগুলো হলো: কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ/গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ওপর, পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী এবং ফোকলোর।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন: শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ: বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
প্রতি কর্মদিবসে বইমেলা বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে। বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ থাকছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের ‘মোড়ক উন্মোচন’ ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে থাকছে। রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় ‘শিশু চত্বর’ স্থাপন করা হয়েছে।