শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে বসে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে তাকে অনত্রে বদলি করা হয়েছে। এর আগে দুইজনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার দৃশ্যের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছরিয়ে পেের। পরে ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারী মতিউর রহমানকে অন্য একটি উপজেলায় বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম। জাজিরা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়,জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একজন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা,একজন উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তা ও দুইজন অফিস সহায়ক কর্মরত আছেন। ওই কার্যালয়ে ভূমির বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকা ছারা কোন সেবা দেয়া হয় না এমন অভিযোগ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। মতিউর রহমান ওই কার্যালয়ে তিন বছর ধরে কর্মরত আছেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান অফিস কক্ষে বসে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এমন দৃশ্যের দুটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছরিয়ে পরেছে। ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি প্রথমে মতিউর রহমানের সাথে কথা বলছেন। এরপর মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। টাকা হাতে নিয়ে তা ড্রয়ারে রাখছেন তিনি (মতিউর রহমান)। এরপর পর ওই গ্রাহকের হাতে কিছু কাগজ তুলে দিলে সে ভূমি অফিস ত্যাগ করেন। ৪ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় মতিউর রহমান তার কক্ষে একটি চেয়ারে বসে আছেন। পাশ থেকে একজন ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডেল (বেশ কয়েকটি নোট) তার কাছে দিচ্ছেন। দ্রুত টেবিল থেকে ওই টাকাগুলো সরিয়ে নিচে ড্রয়ার জাতীয় কিছুতে রাখছেন মতিউর রহমান। এরপরই তার চেয়ারের পেছন দিয়ে ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক শিপা আক্তারকে বের হতে দেখা যায়। ওই ভিডিও ছরিয়ে পরার পর মঙ্গলবার বড়কান্দি ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে বদলি করা হয়েছে।তাকে ডামুড্যার শিধলকুড়া ইউনিয়নে বদলি করা হয়েছে। শিধলকুড়া ইউনিয়নের ইউনিয় সহকারি ভূমি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে বড়কান্দি ইউনিয়নে বদলি করা হয়। গরম বাজার এলাকার ইউনুছ মাদবর নামে একজন বলেন, আমাকে আমার বাবা জমি দলিল করে দিয়েছে, সেই জমি মিউটেশন করতে এসেছি। তিনি আমার থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, গত দুই মাস আগে আমি জমির খাজনা দিতে বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তা আমাকে ১৫০ টাকার একটি খাজনার চেক কেটে দিয়ে ২ হাজার টাকা নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কৃষক বলেন,আমার একটি জমি নামজারির জন্য গেলে মতিউর রহমান টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে অনলাইনে আবেদন করা যাবে না এমন কথা বললে আমি তাকে ৫ হাজার টাকা দেই। পরবর্তিতে আরো টাকা দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে সে আমার কাগজপত্র রাখেন। দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে এখনো তিনি আমার কাজ করে দিচ্ছেন না। এবিষয়ে সদ্য বদলি হওয়া বড় কান্দী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন একাধিক বার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নাই। ওই নারী অফিস সহায়ক শিপার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি ভূমি কর্মকর্তা স্যারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে তা পরিশোধ করেছিলাম। তবে ভিডিওতে যে টাকা লেনদেন দেখা গেছে তা ওই ধারের টাকা নয়। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, তিনি ওই অফিসে দির্ঘদিন যাবৎ আর্থিক লেন দেন করায় তাকে অনত্রে বদলি করা হয়েছে। জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন,বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান তিন বছরের অধিক সময় সেখানে কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষযগুলো আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করার পর অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।