মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

কাশিয়ানীতে ওড়াকান্দি বারুণী স্নান

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

লাখো পূর্ণার্থীর আগমনের মধ্যদিয়ে আজ শনিবার শেষ হচ্ছে তিন দিনব্যাপী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা। শনিবার ভোর ০৬ টা থেকে এ স্নানোৎসব শুরু হয়। যা আগামীকাল রোববার সকালে পূর্ণ স্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২২৩ তম জন্ম তিথি উপলক্ষে স্নানোৎসব ও বারুণী মেলায় এ বছরে প্রায় ১০-থেকে ১৫ লক্ষাধিক ভক্তের আগমন ঘটেছে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্নানোৎসব ও মেলা। এ বছরে মহাস্নানোৎসবের আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শ্রী শ্রী শিবু ঠাকুর। এ স্নানোৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন,জেলা পুলিশ প্রশাসন, কাশিয়ানী থানা এবং স্নানোৎসব ও মেলা উৎযাপন কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় উচ্চ পর্যবেক্ষণ চৌকি ও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয় ব্যাপক নজির বিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের ৩ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছিল। লাখ লাখ মতূয়াভক্ত ও হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্তরা এখানে স্নান করেন পাপ মোচনের জন্য আসেন বলে কথিত রয়েছে। স্নানোৎসব উপলক্ষে বসে বারুণী মেলা। মেলায় কুঠির শিল্পের সামগ্রী, বিভিন্ন খেলনা, মাটির জিনিস, বাঁশের জিনিস, তাল পাখা, খাদ্য সামগ্রীসহ নাগর দোলনাসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন। বিশেষ করে চিনির তৈরী বিভিন্ন পশু পাখি, শিশুদের খেলনার মিষ্টি ইত্যাদি।
কেন ওড়াকান্দি তীর্থস্থান নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ১২১৮ বঙ্গাব্দে কাশিয়ানীর সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম ধন্য হয়ে ওঠে। হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য নাম হরি হলেও তার ভক্তরা তাকে হরিচাঁদ নামেই ডাকতেন। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র। পরে পাশ^বর্তী ওড়াকান্দি গ্রাম হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। এটি গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৩০ কিলো মিটার এবং কাশিয়ানী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হরিচাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল খুবই সামান্য। পাঠশালা অতিক্রম করে তিনি কয়েক মাস মাত্র স্কুলে গিয়েছিলেন। পরে স্কুলের গন্ডিবদ্ধ জীবন ভালো না লাগায় স্কুল ত্যাগ করে তিনি মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। প্রতিকৃতির আকর্ষণে তিনি রাখাল বালকদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তিনি চৈতন্যদেবের প্রেম-ভক্তির কথা সহজ-সরলভাবে প্রচার করতেন। তাঁর এই সাধন পদ্ধতিকে বলা হয় ‘মতুয়াবাদ’, আর এই আদর্শে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের বলা হয় ‘মতুয়া’। মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যিনি মেতে থাকেন বা মাতোয়ারা হন, তিনিই মতুয়া। মতান্তরে ধর্মে যার মত আছে, সেই মতুয়া। ১৮৭২ সালের ব্রিটিশ আদম শুমারিতে ৩৬টি বর্ণের উদ্ভব দেখানো হয়েছিল। তার আগে থেকেই সমাজে বর্ণপ্রথা ও অস্পৃর্শতা প্রচলিত ছিল। তাই হরিচাঁদ ঠাকুর আদর্শ গার্হস্থ্য ধর্ম ও মতুয়াবাদ প্রচার করেছিলেন। এই মতুয়া মতবাদ প্রচার করতে গিয়ে তিনি নীল কুঠির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। সমাজে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছেন। জমিদারের লোকজন মতুয়া মতবাদ প্রচারে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীদের বাধা দিয়ে বর্বর নির্যাতন করেছেন। হরিচাঁদ নিজেও অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি এটি প্রতি করে মতুয়াবাদ প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা ও ধর্মীয় আন্দোলন বা মতুয়া মতাদর্শ প্রচারের আন্দোলনকে পরে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছিলেন তার ছেলে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর। গুরুচাঁদ ১৮৩৬ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে পাঠশালা প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। এগুলো এখনও আলো ছড়াচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com