কালিয়া উপজেলা সদর থেকে জেলা সদর নড়াইলের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। এই সামান্য পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যেতে এখানকার মানুষের সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা। নবগঙ্গা নদীদিয়ে বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের কারনে এই উপজেলার মানুষের সড়ক যোগাযোগের সুখ যেন ভাগ্যে সইছে না। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধিক বাসিন্দাদের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ৬ বছর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নবগঙ্গা নদীর বারই পাড়া নামক স্থানে একটি সেতু নির্মানের কাজ হাতে নেয়। শর্ত অনুযায়ী ২ বছরে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ৩ বার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজটি শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শেষ দিকে এসে নকশা জটিলতা নিরসন করতে দ্বিতীয় নকশা তৈরী ও অনুমোদন করতে গিয়ে নির্মান কাজ কচ্ছপ গতিতে পরিনত হয়েছে, তেমন নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে দ্বিগুন। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে খেয়াঘাট ইজারাদাররা টোল আদায়ের মাত্রা বাড়িয়ে জন প্রতি ১০ টাকা ও মটরসাইকেল প্রতি ৫০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করছে বলে জানা গেছে। যা মানুষের দূর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যে কারনে যাত্রীসহ সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে অতিদ্রুতই সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করা হবে বলে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ দাবি করেছে। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলা সদরসহ এর পূর্বাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৩ লাখ মানষের সাথে জেলা সদরের ও পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগের ভোগান্তি কমাতে ২০১৭ সালে নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মানের কাজ হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য ৬৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যায় বরাদ্দ দিয়ে ৬৫১.৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট কালিয়া সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবালকে ২০১৭ সালের ৩১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্নে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তারা ৩ বার সময়সীমা বৃদ্ধি করে দুই পাশের কাজ শেষ করার পর সেতুর নীচ দিয়ে নৌ-যান চলার সময় নদীর মাঝখানে বলগেটের ধাক্কায় পিলার ভেঙ্গে পড়ার কারন খুজতে গিয়ে ধরা পড়ে নকশা জটিলতা। নৌযান চলাচল নির্বিঘেœ ও সেতুটি নিরাপদ করতে অতিরিক্ত ৬০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে আবার দ্বিতীয় নকশা হিসাবে ষ্টিলস্প্যান নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যাতে এখন ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলমান। সব মিলিয়ে সেতুটির নির্মান ব্যয় এখন ১২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাড়িয়েছে। নির্মানকাজ শেষ হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের সাথে জেলা সদরের ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারের সাথে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ব্যবসা বানিজ্যসহ মানুষের জীবন যাত্রার আমুল পরিবর্তন ঘটবে।খেয়াঘাটের অবস্থা ভালনা। সেতুটি নির্মানের অপেক্ষায় তারা তাকিয়ে রয়েছেন বলে মন্তব্য করে বাঐসোনা গ্রামের একজন সমাজকর্মী রাশেদ কামাল বলেছেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজে যাওয়া আসাসহ অসুস্থ্য রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া বা উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে নেয়াও সম্ভব হয়না। সর্বপরি সেতুর নির্মান কাজ বিলম্বিত হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ইজারাদাররা অধিক লাববান হওয়ার আশায় খোয়া পারের ক্ষেত্রে সরকার নির্দ্ধারিত টোলের চেয়ে তিনগুন টোল আদায় করছেন। যা এখন জনপ্রতি ১০ টাকা ও মটরসাইকেল প্রতি ৫০ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ও ভ্যানগাড়ির জন্য তাৎক্ষনিক টোল আদায় করা হয়ে থাকে। যা এখন যাত্রী সাধারনের দূর্ভোগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশে একটি সেতুর নির্মান কাজ এভাবে আটকে থাকা খুবই দু:খ জনক। কালিয়া পৌরসভার মেয়র মো. ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেছেন, কালিয়ার মানুষের স্বপ্নে এই সেতুটি নির্মান সম্পন্ন হলে উপজেলার মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। তাই তিনি দ্রুত সেতুটি নির্মানের দাবি জানিয়েছেন। কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা বলেছেন, খেয়াগাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টিতে কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেছেন, সেতুটির নির্মান কাজে এই অনাকাঙ্খিত বিলম্ব মানুষের ক্ষোভের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। নকশা জটিলতা নিরসনের জন্য ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ষ্টিলস্প্যান নকশা তৈরী করা হয়েছে। তিনি অতিদ্রুত নির্মান কাজ শেষ করে এলাকাসির দূর্ভোগ নিরসনের দাবি জানিয়েছেন। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, নকশা জটিলাতার কারনে সেতুটি নির্মানের জন্য দ্বিতীয় ষ্টিলস্প্যান নকশা অনুমোদন করে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। আশা করি ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মান কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।