একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে চরম গরমের কারণে নরসিংদীর মাধবদী বাজারে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের। তাই প্রচ- গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে বিকল্প খুঁজছে স্থানীয় মানুষ। ফলে বেড়েছে চার্জার ফ্যানের (রিচার্জেবল ফ্যান) চাহিদা। নামিদামি ব্র্যান্ডসহ কোন সাধারণ শোরুমেই এখন মিলছে না চার্জার ফ্যান। এই চাহিদাকেই পুঁজি করে পণ্যটির কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল মাধবদী পৌর শহরের বাজারে ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইলেকট্রনিক পণ্যের খুচরা ও পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। মাধবদী বাজারে ৪০/৫০ টি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ দোকানে নেই চার্জার ফ্যান। যদিও পাওয়া যায় তাও দাম কয়েকগুন বেশী। সবারই এক কথা, স্টক শেষ। মাধবদী বাজারের মুড়ি পট্রি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা চার্জার ফ্যানের। কথা হয় ভগীরথপুর থেকে ফ্যান কিনতে আসা কাপড়ের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তিনি বলেন, তিন মাস আগে এসি কিনতে গিয়ে নোভা ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান দরদাম করেছিলাম। আজ কিনতে গিয়ে দেখি ওই ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। যাও দুএকটা দোকানে খুজে পেয়েছি তাও এখন সাড়ে ৮ হাজার টাকার ওই কম্বো (এসি-ডিসি) ফ্যানের দাম চাচ্ছে ১৪ হাজার টাকা। শফিকুল আরো জানান, অনলাইনে এই ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। বলছে স্টক আউট। এ সময়ে মাধবদী বাজারে চার্জার ফ্যানের আরো বহু ক্রেতার দেখা মেলে। তারা মাধবদীর আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম থেকে এসেছেন এসব ফ্যান কিনতে। বেশিরভাগ ক্রেতা জানিয়েছেন, তাদের এলাকার দোকান বা শোরুমে চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মাধবদীর কিছু কিছু দোকানে মিলছে চার্জার (রিচার্জেবল) ফ্যান। ক্রেতাদের অভিযোগ, সংকটকে পুঁজি করে এখন চার্জার ফ্যানের দাম নেয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুইগুণ বেশী। দেখা গেছে, ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরে চার্জার ফ্যানের দরদাম করছেন। কিন্তু পছন্দ হলেও দামে মিলছিল না। এছাড়া কোন ধরনের চার্জার ফ্যান কিনলে ভালো হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেরও শেষ নেই। সালমা টেক্সটাইলের মালিক বাবুল মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, গত ২৭ রমজান দামি ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান কিনি তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ওই ফ্যানের দাম এখন চাচ্ছে ছয় হাজার টাকা। আগের ফ্যানের ক্যাশ মেমো দোকানে দেখিয়েছি। এরপর ১০০ টাকা কম নেবে বলে জানিয়েছেন দোকানি। তিনি বলেন, লোডশেডিং এতটাই বেড়েছে যে থাকা যাচ্ছে না। কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম গরমের কারণে। ফলে বাধ্য হয়েই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। আলতাফ হোসেন নামের আরেক ক্রেতা নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী অনলাইন থেকে দুই হাজার টাকায় একটি ফ্যান অর্ডার করতে বলেছিলেন। তখন কিনিনি। গতকাল স্থানীয় এক দোকানে ওই ফ্যানের দরদাম করেছিলাম, তারা সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। একদিন পর আজ এখানে এসে দেখি চার হাজার টাকা চাচ্ছে। মাধবদী মুড়ি পুট্রি ও সোনার বাংলা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, গেলো এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতিটি ছোট চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। মাঝারি আকারের (হাফ স্ট্যান্ড) ফ্যানের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া বড় স্ট্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম। মনোজ ইলেক্টনিকের মালিক মনোজ জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সোনার বাংলা মার্কেটের সিটি ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী সামসুল হক বলেন, আমদানিকারকরা ইচ্ছামতো দামে ফ্যান বিক্রি করছেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। গতকালের তুলনায় আজ প্রতিটি ফ্যান ২০০ টাকা বাড়তি দরে কিনেছি। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন তারা (আমদানিকারকরা) দাম বাড়াচ্ছেন। সবশেষ এক সপ্তাহে দাম বেশ বেড়েছে। আমরা যেভাবে কিনছি, সেভাবেই বিক্রি করছি। মাধবদীর ফ্যান বিক্রতাদের দেখা গেছে, ক্রেতাদের সাথে কথা বলার সময় নেই তাদের। বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে তাদের চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। তবে বেশ কিছু দোকানদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় ফ্যান ক্রেতারা। চার্জার ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ আনেন তারা। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পাইকারী দোকানদার বলেন, চাহিদার কারণে আমরা ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিলে সেটা খুচরায় ৫০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরমের সঙ্গে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা এখন তুঙ্গে। চাহিদার পরিমাণ ফ্যানের জোগান এখন ঢাকার আমদানিকারকদের কাছে নেই। তারা বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ চার্জার ফ্যান আমদানি করেন। কিন্তু এবার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে তৈরি হয়েছে পণ্যের সংকট, বেড়েছে দামও। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হারে কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধি ও এলসি খোলার জটিলতার কারণে আমদানি খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে এসবের প্রভাবও রয়েছে বাজারে। তবে শুধু আমদানি নয়, দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও এখন চার্জার ফ্যান তৈরি করে থাকে। ফলে এক সময় এ বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও এখন তা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। তবে দেশি ব্র্যান্ডের এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেও এখন চার্জার ফ্যানের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। গরম বাড়ার কারণে শুধু যে শোরুম আর দোকানে ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে- তা নয়, ফুটপাতের অনেক দোকানেও বিক্রি হচ্ছে ছোট চার্জার ফ্যান। তবে সেখানেও দাম বেশ চড়া।