দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছেই। গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবারও (৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। দাম বাড়ার তুলনায় দাম কামার তালিকায় আড়াইগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে।
এই পতনের বাজারে বিপরীত পথে হেঁটেছে ব্যাংক খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। দাম কমার বদলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়া সার্বিক বাজারের পতন ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। অবশ্য ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ার কারণে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক কমেছে। তবে সিএসইতে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়নি। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। আজ বৃহস্পতিবার দরপতন হওয়ার মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।
এদিন শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। এই উত্থান তো এই পতন- এভাবেই চলে লেনদেনের বেশিরভাগ সময়। এ অস্থিরতার বাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসায় ১০ মিনিটের মধ্যে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এরপর আবার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও পরক্ষণেই পতনের মধ্যে চলে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৫ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে বড় দরপতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের।
কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে একের পর এক ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। এতে প্রধান সূচকের পতনের মাত্রা কমে আসে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী হয় বাছাই করা সূচক। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে ৯৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫০ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে ব্যাংক খাতের ২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ৮টির দাম কমেছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। প্রধান মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৯৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৭ টাকার। ২১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইবনে সিনা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, জিপিএইচ ইস্পাত এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৬টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।