বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা আর গণতন্ত্র ফিরে আসা একইসূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল মঙ্গলবার নয়া পল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্বাস্থ্য, সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। গয়েশ্বর বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা আর গণতন্ত্র ফিরে আসা একই সূত্রে গাঁথা। আমরা যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে তারেক রহমান ফিরে আসবে। এখানে কিন্তু জেল-জুলুমের ভয় না। যুদ্ধকালীন সময়ে তারেক রহমানের বয়স যখন ১০ বছর তখন তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে পাকিস্তানি মিলিটারি ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বলেন আগামী দিনের নেতা তারেক রহমান। আমি আপনাদের এ কথার সাথে একমত নই। তারেক রহমান ইতোমধ্যে তো নেতা। তারেক রহমানের সম্ভাবনা কতটুকু তা আমরা কতটুকু গুরুত্বের সাথে ভাবি তার থেকে বেশি গুরুত্বের সাথে ভাবেন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের মধ্যে গণতন্ত্রের প্র্যাকটিস নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তারেক রহমান কিন্তু সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে ইলেকশন মাধ্যমে। তারা (আওয়ামী লীগ) কেন ইলেকশন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নাকি লাইফ সাপোর্টে আছে। পুরা দেশটাই তো তারা লাইফ সাপোর্টে রেখেছেন। এখন আলাদা আলাদাভাবে কোন ব্যক্তি, কোনন দল লাইফ সাপোর্টে আছেন তা নির্ণয় করা কঠিন। কে লাইফ সাপোর্টে আছে, সেটা যদি অনুধাবন করতে পারতেন তাহলে অনেক আগেই মন্ত্রিসভার ছেড়ে দিতেন। গয়েশ্বর বলেন, দেশ টিকবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে মানুষ। রক্ত দিয়ে কেনা বাংলাদেশ, মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে অর্জিত বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ বাংলাদেশের জনগণের হাতে নাই। আপনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন, দেশটা তো আপনার হাতে নাই। দেশ কারো একার ভাবনাচিন্তায় স্বাধীন হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, দেশ স্বাধীন করেছে এদেশের আপামর জনগণ। দেশের মালিক জনগণ। সুতরাং আপনার চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে প্রত্যাহার করবেন। দেশটা বিনা সংগ্রামে স্বাধীন হয়নি, জনগণের অধিকার কখনো আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অনেকে বলে তারেক রহমান বিদেশ থেকে কি করবেন? শেখ মুজিব জেলে ছিলেন, দেশ স্বাধীন হয়নি? তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকলে গণতন্ত্র উদ্ধার হবে না এই চিন্তা আপনারা কোথায় পেলেন? তিনি তো দৃশ্যত বাইরে আছেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত আপনার আমার অন্তরে আছেন, ভাবনায় আছেন, চিন্তায় আছেন, চেতনায় আছে। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে তার সাথে আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করছি। আলোচনা করে আমরা আমাদের চলার পথের কৌশল ঠিক করছি। আমরা অন্তর থেকে হৃদয় থেকে তারেক রহমানের জন্য দোয়া করি। তারেক রহমান সুস্থ হবেন দেশে ফিরবেন। আগামীদিনের জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্ব সশরীরে দিবেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে। স্বাধীন সার্বভৌমত্ব চেতনায় উজ্জীবিত হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সভাপতি কাজী মো: আমির খসরুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাদলের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, দক্ষিণ শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমন ভূঁইয়া প্রমুখ।
একান্ত জীবনযাপন খালেদা জিয়ার: করোনাকালে একান্ত জীবনযাপন করছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় কোনো রাজনৈতিক আলাপচারিতায় নেই তিনি। কদাচিৎ কাউকে সাক্ষাৎ দিলেও তা হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনেই। একান্তই পারিবারিক পরিম-লে দিন কাটছে তার। শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে করোনার কারণে বেগম জিয়ার সঠিক কোনো চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। মুক্তির পর ৯ মাস কেটে গেলেও বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা শুরু করা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলেও খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। তবে তার হাত ও পায়ের ব্যথা এখন অনেকটা কমেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা শুরু হবে তা জানাতে পারছেন না বিএনপি ও পরিবারের সদস্যরা। ২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর চলতি বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরো এক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। জামিনে মুক্তির পর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে খালেদা জিয়ার হাত ও পায়ের ব্যথা একটু কম। তবে শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। হাঁটাচলা করতে পারেছেন না। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার দেখভাল করেন। এ ছাড়া দুইজন নার্স রয়েছেন তারাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি। আপাতত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার মূল দায়িত্বে আছেন লন্ডনে অবস্থানরত পুত্রবধূ ডা: জোবায়দা রহমান। তার পরামর্শেই মূলত চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা: এ জে এম জাহিদ হোসেন ও ডা: মামুন নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। ডা: মামুন প্রায় প্রতিদিনই তার শরীরিক অবস্থা জানতে বাসায় যান। মাঝে মধ্যে ডা: জাহিদ হোসেনও বাসায় যান।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন খালেদা জিয়া। তার মেরুদ-, বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে শক্ত হয়ে যায়। দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। তিনি ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান। বাম চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে তার। খালেদা জিয়ার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমান ও দুই পুত্রবধূ এবং নাতনীদের সাথে কথা বলে সময় কাটান। এ ছাড়া পত্রিকা ও টিভি দেখে বাসায় সময় কাটান তিনি। দলের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার সুযোগ পান না। তবে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সাথে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখা করেছেন।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে চাইলে চিকিৎসক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। আগের মতো আছে। পরামর্শ মোতাবেক রুটিন ওষুধগুলো খাচ্ছেন তিনি। বাসা থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রোপার ট্রিটম্যান্টের জন্য তাকে একটা সেন্টারে (হাসপাতাল) নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক’দিন আগে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত নন। এই যে বলা হচ্ছে, উনার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা না। ডিফারেন্সটা হচ্ছে, শুধু হাসপাতাল থেকে তাকে তার বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে তিনি হোমলি পরিবেশের মধ্যে আছেন। যেটাকে সোজা কথা বললে বলা যায় এটা হচ্ছে, গৃহে অন্তরীণ করা। তিনি খালেদা জিয়ার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের কথাও বলেন। গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ এখন খালেদা জিয়াকেই ভুলে যাচ্ছে। তিনি এখন অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। তাহলে দেশের মানুষ জানবে অন্তত তার চিকিৎসা হচ্ছে।