২০২১ সালেও আলোচনায় থাকবে করোনার ভ্যাকসিন
গত ২৪ ঘণ্টায় (৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মারা গেলেন সাত হাজার ৫৭৬ জন। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯৯০ জন, এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১৯৭ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৬ জন।
গতকাল শুক্রবার (১ জানুয়ারি) করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানায়।
গত বছর ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এর প্রায় তিন মাস পর গত ৮ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের কথা জানায়। এর ১০ দিন পর প্রতিষ্ঠানটি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর খবর দেয়। গতকাল শুক্রবারের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার আট দশমিক ১৮ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এতে বলা হয়, দেশে বর্তমানে ১১৪টি আরটি-পিসিআর, ২৬টি জিন-এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগারসহ মোট ১৮০টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৪টি। অ্যান্টিজেনসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ১০৩টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৭০১টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ২৫ লাখ ৬৭ হাজার ৪৭টি এবং বেরসকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬৫৪টি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের মানে হচ্ছে, এটি নিরাপদ ও কার্যকর। তবে অক্সফোর্ড টিকা অনুমোদন পাওয়ার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন যেমন ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এটিতে তা নেই। সাধারণ ফ্রিজেই এটি সংরক্ষণ করা সম্ভব। গত ৫ নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো এই ভ্যাকসিন আনবে। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সেরাম ইনস্টিটিউট দেবে। তবে এই পুরো ডোজ বাংলাদেশ একবারে পাবে না। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ আসবে। যা দিয়ে প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রতিজনের জন্য দুটি করে ডোজ দরকার হবে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে প্রথম ডোজের ২৮ দিন পর। বাংলাদেশে সরকার সে ভ্যাকসিন দেবে বিনামূল্যে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পাবেন বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন হওয়া মাত্রই সেটি ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও পেয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা হয়েছে, রাখার ব্যবস্থা করেছি, ভ্যাকসিন দেওয়ার জনবলের প্রশিক্ষণ চলছে, পাশাপাশি এ সম্পর্কিত সব কার্যক্রম স্বাস্থ্য অধিদফতর চূড়ান্ত করেছে। আর এজন্য অর্থ বিভাগ থেকে প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
তবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী অনেকের সঙ্গেই বাংলাদেশের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সানোফি, ফাইজার, বায়োটেক, সিনোভ্যাক- সবার সঙ্গেই বাংলাদেশ কথা বলছে। যোগাযোগের কোনও ঘাটতি নেই। ভ্যাকসিন আমরা পাবো, যেটা সুলভে পাওয়া যাবে, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, সেটাই বাংলাদেশে আনা হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি লাগবে অবশ্যই।
গত ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বৈঠক হয়। সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা কী হয়েছে জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ভ্যাকসিন আনার জন্য যে প্রস্তুতি তাতে সবচেয়ে বড় বিষয় টাকা বরাদ্দ। টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াও অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা ভ্যাকসিন পাবো, অনেক দেশের চেয়েই আগে পাবো। এমনকি থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার চেয়েও আমরা আগে পাবো। তবে ভ্যাকসিন আসার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর সুষ্ঠু বিতরণ। সেটা নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা হয়েছে। সেখানে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী মিস ম্যানেজমেন্ট হতে পারে সেগুলো যাতে না হয় তা নিয়েও কাজ হচ্ছে। তবে এটা কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়, এখানে স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো ভালোভাবেই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যদি ইংল্যান্ডেও যদি অনুমোদন হয় তাহলে আমাদের আইন অনুযায়ী দেশের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এর অনুমোদন দেবে। তবে এরপরের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হলেই আমাদের দেশে ভ্যাকসিন চলে আসবে। আমি আশাবাদী, সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হবে ভ্যাকসিন। এখানে মিস-ম্যানেজমেন্টের সুযোগ খুবই কম।
দেশে প্রাথমিকভাবে ২০ শতাংশ যারা টিকা নেবেন তাদের নির্ধারণে ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুসারে মোট চারটি পর্যায়ে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। বাকি ২০ শতাংশকে হার্ড ইমিউনিটির (গণরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) কারণে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। চার ধাপে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বাংলাদেশের মানুষকে।
পর্যায়-১ (এ) এই পর্যায়ে একেবারেই প্রথম পর্যায়ে রয়েছেন প্রায় ৫২ লাখ মানুষ, যেটা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। তার মধ্যে সবার আগে রয়েছেন দেশের সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত করোনা রোগীদের চিকিৎসাসহ সরাসরি সম্পৃক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা (অ্যাম্বুলেন্স-চালক, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী)।
স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এরপর রয়েছেন সব বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে (এনজিওসহ) কর্মরতরা। যার সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।
তারপরের ধাপে আছেন সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নন-কোভিড সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা। তাদের মধ্যে আছেন প্রায় এক লাখ ২০ হাজার প্রশাসনিক কর্মী, লন্ড্রি ও কিচেন কর্মী, অফিস সহায়ক, চালক ও অন্যরা।
স্বাস্থ্যকর্মীদের পর প্রথম ধাপেই টিকার তালিকাতে আছেন দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, যারা বয়স্ক এবং যাদের অন্যান্য রোগের কারণে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।
প্রথম ধাপের এই তালিকাতে রয়েছেন সম্মুখ সারির কর্মীরা। তাদের মধ্যে আছেন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপির প্রায় পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এরপর রয়েছেন আনুমানিক প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট।
তারপর রয়েছেন মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পাঁচ হাজার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা।
এরপরই রয়েছেন ৫০ হাজার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী। আছেন এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি (সংসদ সদস্য, মেয়র, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, কাউন্সিলর ইত্যাদি) এবং এরপরই আছেন সিটি করপোরেশনের প্রায় দেড় লাখ কর্মী। ইমাম, মুয়াজ্জিন, চার্চ, মন্দির, বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের ধর্মীয় পেশাজীবীরা রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ ৫ লাখ ৮৬ হাজার।
এরপর ৭৫ হাজার দাফন ও সৎকারে যুক্ত কর্মী; গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন ব্যবস্থায় জড়িত কর্মী, যাদের সংখ্যা প্রায় চার লাখ। এরপর আছেন প্রায় দেড় লাখ বন্দরকর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক (তারা কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যাবেন)। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে কাজ করতে হয় এমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা (চার লাখ) এবং এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মী।
এছাড়া এই তালিকায় আরও রয়েছেন এইচআইভি, যক্ষ্মা, ক্যান্সারে আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের ঝুঁকি রয়েছে। তাদের সংখ্যা ছয় লাখ ২৫ হাজার। এছাড়া বাফার রিজার্ভ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য জমা রাখা হবে প্রায় ৭৮ হাজার জনকে দেওয়ার মতো টিকা।
পর্যায়-১ (বি) প্রথম পর্যায়ের বি ধাপে প্রাধান্য পাবেন ষাটোর্ধ্বরা। তাদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। করোনায় এই বয়সীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সীদের বিশেষ বিবেচনা করার জন্য সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
পর্যায়-২ এক কোটি ৭২ লাখ (জনসংখ্যার ১১-২০ শতাংশ) মানুষকে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে যুক্ত হবেন ৫৫ বছর বা তারও বেশি বয়সীরা, যারা আগের ধাপগুলোতে টিকা পাননি (৫৫,৬৬,৭৫৭ জন), বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত আরও ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯৩৬ জন, সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী (১৭,৮৮,০৫৩ জন), পূর্ববর্তী ধাপে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মী (৫০,০০০ জন), দুর্গম অ লগুলোর বাসিন্দা (১০,১১,২২৮ জন), ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী (১২ লাখ), গণপরিবহন কর্মী (পাঁচ লাখ), হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ফার্মেসিতে কর্মরত ব্যক্তি (২,৪২,৯৬৪) এবং ৩৬ লাখ পোশাককর্মী। এর বাইরেও জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত থাকবে তিন লাখ টিকা।
পর্যায়-৩ তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় আসবেন আরও প্রায় তিন কোটি ৪৫ লাখ মানুষ (জনসংখ্যার ২১-৪০ শতাংশ)। এই ধাপে অগ্রগণ্য হবেন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, যারা আগের ধাপে টিকা পাননি (৬,৬৭,২০৪ জন), অন্তঃসত্ত্বা নারী (যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরাপদ ঘোষিত হয়), অন্যান্য সরকারি কর্মচারী, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, রফতানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী, কয়েদি ও জেলকর্মী, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী, বিভিন্ন ডরমিটরি নিবাসী, গৃহহীন জনগোষ্ঠী, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী; অন্যান্য গণপরিবহনের কর্মী, যারা আগের ধাপে অন্তর্ভুক্ত হননি, ৫০-৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তি, যারা আগের ধাপে অন্তর্ভুক্ত হননি।
পর্যায়-৪ চতুর্থ ও শেষ পর্যায়ে জনসংখ্যার বাকি ৪১-৮০ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে আরও ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এ ধাপে শিশু, কিশোর, স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ও অন্যদের টিকার আওতায় আনা হবে।
কোভ্যাক্সের আগেই যদি সরাসরি ক্রয় চুক্তির আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চলে আসে, সেক্ষেত্রে পর্যায়-১ বি (৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী) এবং পর্যায়-১ একসঙ্গেই শুরু করা সম্ভব হবে। ১৮ বছরের নিচের কোনও ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মায়েরা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ না নেওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এদের ভ্যাকসিন দেওয়ার আওতামুক্ত রেখেছে।
সে কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ ভাগ ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের এবং দেশে গর্ভবতী প্রায় ৩৫-৪০ লাখ মায়েদের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া লাগবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০ বছরের নিচে কাউকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। এছাড়া এক কোটি মানুষ আছেন দেশের বাইরে। বছরে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। এবং আরও কিছু অসুখ রয়েছে, যাদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না। তাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে না, অর্থাৎ তারা কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রমের বাইরে থাকবেন।
গর্ভবতী নারী এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়নি জানিয়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের বাইরে কারা জানতে চাইলে জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার কোনও রিকমেন্ডেশন নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের বিষয়ে সেফটি ইস্যু না জানবো ততক্ষণ পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত তাই তারা এ কার্যক্রমের আওতার বাইরে।
তিনি বলেন, সাধারণত অন্য সময়ে গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের বরং প্রাধান্য দেই, এখানে এটা ভিন্ন হচ্ছে। কারণ, এগুলো সবই ইমার্জেন্সি অ্যাপ্রুভাল পাওয়া ভ্যাকসিন। বাচ্চাদের ওপর যতক্ষণ ট্রায়াল হয়ে সেফটি রেজাল্ট না পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেটা দিতে পারি না। আপাতত তাই এই গ্রুপটা ভ্যাকসিনের বাইরে থাকছে।