মাকে নিজের কাছে নিতে ভাই এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ বোনের। অতপর পুলিশ হেফাজতে সারারাত থানায় কাটালেন বৃদ্ধা। পরের দিন আদালত ঘুরে বিচারকের নির্দেশে ছেলের কাছে নয়, মেয়ের কাছেই গেলেন বিধবা বৃদ্ধা রাহেলা বেগম(৮৪)। কিন্তু মা থাকতে চান অন্য মেয়ের কাছে। বিধবা বৃদ্ধা জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়–ইচূড়া ইউনিয়নের পূর্ব নলছিয়া গ্রামের মৃত উসমান গণির স্ত্রী। এই ঘটনা শুক্রবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজড়ে আসে জেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের। মাদারগঞ্জের পূর্ব নলছিয়া গ্রামের বিধবা বৃদ্ধা রাহেলা বেগমের এক ছেলে ও চার মেয়ে। বেঁচে নেই দ্বিতীয় মেয়ে মনোয়ারা বেগম। স্বামী মারা যাওয়ার পর রাহেলা বেগম নিজ বাড়িতে বড় ছেলে আলতাফুর রহমানের কাছে থাকা শুরু করেন। সেই বাড়িতে ভালোমতো বসবাস করছিলেন বৃদ্ধা রাহেলা বেগম। হঠাৎই মেয়ে আনোয়ারা বেগম অভিযোগ তুলেন-আলতাফুর রহমানের মানসিক নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা। সেই অভিযোগসহ মায়ের সুচিকিৎসার জন্য আনোয়ারা তার জিম্মায় দেওয়ার জন্য গত বুধবার (১৭ মার্চ) সাধারণ ডায়েরি করেন মাদারগঞ্জ থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে মাদারগঞ্জ থানা থেকে নারী পুলিশ সদস্যসহ একদল পুলিশ পূর্ব নলছিয়া গ্রামে যান বৃদ্ধা রাহেলাকে উদ্ধার করতে। এ সময় আলতাফুর রহমান, তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা বৃদ্ধা রাহেলাকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কোন কর্ণপাত করেনি। পুলিশ একটি সিএনজিতে করে ওই বৃদ্ধা রাহেলাকে থানায় নিয়ে যান। ওইদিন বিকেল থেকে পরের দিন বেলা একটা পর্যন্ত বৃদ্ধা রাহেলা মাদারগঞ্জ থানা হেফাজতে ছিলেন। মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুবুল হক জানান, বৃদ্ধার মেয়ে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে রাহেলা বেগমকে ছেলের বাড়ি থেকে থানায় আনা হয়। তিনি যেহেতু আসামি নন, তাই তাকে গারদখানায় রাখা হয়নি। তাকে থানায় আনার পর থানার নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্কের দায়িত্বে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। বুধবার রাতে তাকে ভালো খাবারের ব্যবস্থাসহ কম্বল বিছানাও দেওয়া হয়। ওসি মাহবুবুল হক আরো জানান, তাকে থানায় আনার পর রাতে তার ছেলে আলতাফুর রহমান ও তিন মেয়েকে নিয়ে থানায় বৈঠক হয়েছে। আনোয়ারা তার মাকে তার জিম্মায় চেয়ে আবেদন করলেও বৃদ্ধা রাহেলা তার ছোট মেয়ে আয়শার কাছে যেতে চান। কিন্তু আয়শা বেগম খুবই অস্বচ্ছল। তবে ছেলে আলতাফের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ নেয় মায়ের। ফলে এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে বৃদ্ধা রাহেলাকে আদালতের মাধ্যমে তার তিন মেয়ের যেকোন একজনের জিম্মায় দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার যথারীতি বৃদ্ধা রাহেলাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ চেয়ে জামালপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীরের আদালতে আবেদন করেন থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সুজন মিয়া। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীর বৃদ্ধা রাহেলা বেগমকে মেয়ে আনোয়ারা বেগমকে নিরাপদ হেফাজতে থাকার আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর আনোয়ারা বেগম মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। এদিকে বৃদ্ধা রাহেলার ছেলে আলতাফুর রহমান নিউজ বাংলাকে বলেন- তার বৃদ্ধা মা রাহেলা তার বাড়িতে স্বস্তিতেই জীবনযাপন করেছেন। তার ওপর কোন মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। তার প্রতি কোন অযন্ত অবহেলা করা হয়নি। কিন্তু মায়ের কিছু সম্পত্তির লোভে বোনেরা জোটবব্ধ হয়ে মাদারগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে প্রভাব খাটিয়ে মাকে তার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আলতাফুর রহমান আরো বলেন- মাকে তার জিম্মায় নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার একজন আইনজীবীর মাধ্যমে একই আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন।ওই আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীর আলতাফুর রহমানের আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২২ মার্চ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন। জেলার মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম নিউজ বাংলাকে বলেন- মাকে নিয়ে এমন রশি টানাটানির ঘটনা জামালপুরে খুবই বিরল। শুধু মাত্র ছেলে মেয়ের দ্বন্দের কারনেই একজন বৃদ্ধা মাকে কষ্ট করে থানায় থাকতে হলো সারা রাত। জীবনে প্রথমবার আদালতের বারান্দায় যেতো হলো বৃদ্ধা রাহেলা বেগমকে। এই ঘটনাটি ভালোভাবে নিচ্ছে না জেলাবাসী। বৃদ্ধা রাহেলা বেগম ৫ সন্তানের জন্মদাত্রী। কিন্তু তিনি যে কার মা সেটা বোঝায় এখন মুশকিল।