বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘর : স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিপাকে সুনামগঞ্জের ইদ্রিস মিয়া

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

“থাকে ভাঙ্গা ঘরে কত কষ্ঠ করে/অনাহারে মরে অন্ন জুটেনা/দীনহীন জনে ডাকে আকুল প্রাণে/তবে কেন দয়াময় তোর দয়া হয়না”সুনামগঞ্জের পঞ্চরত্ন বাউলের মধ্যমণি গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা ও বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের এ যেন এক বাস্তব চিত্র। যে চিত্রের নায়ক সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র অসহায় ইদ্রিস মিয়া। ছয় সন্তানের জনক তিনি। বাড়তি ইনকাম না থাকায় শুধুমাত্র সবজি বিক্রি করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালানোসহ ৮ সদস্যের পরিবারের সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে প্রতিনিয়তই তাকে হিমশিম খেতে হয়। সামান্য বসতভিটাটুকু ছাড়া নেই কোনো ফসলি জমিও। করোনাকালে সবজি ব্যবসায় তেমন সুবিধা করতে না পারায় স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে ইদ্রিস মিয়ার একমাত্র বসতঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পরেছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামে কেবল একটিমাত্র খড়ের ঘর। আর ভাঙ্গাচুরা এই খড়ের ঘরটিই একমাত্র আশ্রয়স্থল হতদরিদ্র ইদ্রিস মিয়া ও তার পরিবারের। ১৮ এপ্রিল রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের একাংশ বিধ্বস্ত হলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরেরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরটি সাময়িক মেরামত করা হলেও এখনো চালের পচা খড় চুইয়ে ঘরের মেঝেতে পরছে বৃষ্টির পানি। ঘরের বেড়ার বেশিরভাগ অংশ ভাঙ্গা। একপাশে বাঁশের কঞ্চিতে ডিকা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছ ঘরে বেড়া। যেকোনো মুহূর্তে ঝড়ো বাতাসে বেড়াসহ পুরোঘর ধসে প্রাণহানির মতো বড় ধরনের অনাকাঙ্কিত দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুণ বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে খড়ের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ইদ্রিস মিয়া। আলাপকালে ইদ্রিস মিয়া হতাশ হয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘টাকা এক হাতে রুজি করি, আরেক হাতে খরচ করি। ছয় সন্তানের মুখে খাবারই ভালোভাবে জুটেনা। দিনে আনি দিনে খাই। ঘর বানাতে অনেক টাকা লাগে। এখন অভাবের দিন। এতো টাকা পাব কই? ঝড় তুফানের দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গাও নাই। কপালে মৃত্যু থাকলে এখানেই মরব।’মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদুত্যের আলোও পৌছেনি ইদ্রিস আলীর ঘরে, সমস্ত গ্রাম বিদুত্যের আলোকে আলোকিত থাকলেও একমাত্র ইদ্রিস আলী এখনও অন্ধকারে ,এ লজ্জা কার। প্রতিবেশি হোসেন মিয়া বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে রাতে ঘর ভেঙ্গে গেলে তৎক্ষণাৎ আমাদের বাড়িতে তারা আশ্রয় নেয়। ঘর সাময়িক মেরামত করা হলেও ঘরের অবস্থা একদম নড়বড়ে। যেকোনো সময় ভেঙ্গে ধসে পড়ে যেতে পারে। এই পরিবারের জন্য একটা ঘর অতি জরুরি দরকার।’ স্থানীয় বাসিন্দা আলীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এলাকার সবচেয়ে দরিদ্র পরিবার ইদ্রিস মিয়ার। সেদিন প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেলাম তার ঘরে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী নাই। পরে আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করেছি। সম্প্রতি তার একমাত্র বসতঘরটিও ভেঙ্গে গেছে। আমরা এলাকার যুবকরা স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এক বান টিন সহায়তা করবেন বলে কথা দিয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিক আশীষ রহমান বলেন,এই অসহায় পরিবারটির সহযোগিতায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সুহৃদয়বান ব্যক্তিবর্গকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহবান জানাই।’ এব্যাপারে আলাপ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনূর রশীদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে পরিষদের ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা নাই। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই অসহায় পরিবারকে এক বান টীন সহায়তা করব। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের হাতে কোনো বরাদ্দ নেই। তারা আপাতত ঘরটি মেরামত করে থাকুক। আমরা ঘরের চাহিদা পাঠাব। ঘরের ছবিসহ তারা লিখিত আবেদন করলে পরবর্তীতে ঘরের কোনো ধরনের বরাদ্দ/সহায়তা আসলে আমরা এই পরিবারটিকে সহায়তা করব। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ইদ্রিস মিয়া অবশ্যই সরকার প্রদত্ত সহায়তা পাবেন। তবে বিষয়টি আবেদন আকারে তিনি যেন ইউএনও কে অবগত করেন। সরকার কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে প্রতিবছরই কোননা কোনভাবে বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর মেরামতের জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। আমি যাতে ইদ্রিস মিয়ার মাথাগুজার ঠাই হয় সেব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো।

ই-খ/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com