আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী।এ শিল্পের কদর আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। মৃৎশিল্পের কদর কমছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতেও। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও চাহিদার সল্পতাসহ নানা কারণে বিলুপ্তের পথে এ শিল্প। একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, অন্যদিকে আধুনিক যুগের যন্ত্রবিপ্লবের হুমকির মুখে পতন- এ দু’য়ের ফলে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে চলেছে মৃৎশিল্পের স্থায়িত্ব ও বিকাশের পথ।ফটিকছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম মৃৎশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও বর্তমানে বেকার জীবন পার করছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারো কারিগর।মাটির তৈরি গৃহস্থালির এসব পণ্য সামগ্রীর চাহিদা ক্রমশ কমে যাওয়ার কারণে এ শিল্পের কদর আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। এক সময় উপজেলার ভূজপুর, নারায়ণহাট, দাঁতমারা, নানুপুর ও লেলাং ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করত। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর রহিম আলী সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাটির এসব তৈজষপত্র তৈরিতে যেসব যান্ত্রিক চালকল এবং জ্বালানি ব্যবহৃত হয় তার ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম। ফলে পেশাটি হয়ে পড়েছে অলাভজনক। জানা গেছে, কাঁচা মালের দাম বাড়তি হওয়ায় কারিগররা মাটির জিনিস তৈরি করে আশানুরূপ লাভও করতে পারছে না। তাই জীবন ও জীবিকার তাগিদে অনেকে পরিবর্তন করছে পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ‘কুমার পেশা’। এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা জানান, নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, কলস, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যালঘুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এতে একদিকে কারিগরেরা সংকটে পড়ছে পরিবার নিয়ে, অন্যদিকে দেশ হারাতে বসেছে নিজস্ব ঐতিহ্য। তাই মৃৎশিল্পকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তার দাবি সংশ্লিষ্টদের।মৃৎশিল্প বাঁচাতে এবং এর সাথে সংযুক্ত শত শত পরিবারের জীবিকা রক্ষায় এগিয়ে আসবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা সবার। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাজিব আচার্য বলেন, ‘শিল্পকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সহায়তা নিতে কেউ এগিয়ে এলে আমাদের পক্ষ থেকে শিল্পের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে’।