দুটি কুঁড়ি আর একটি পাতার এই চা-পাতা দেশের অর্থকরী ফসল। দেশের চাহিদা পূরণ করে এখন এটি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা এই চা-পাতার উৎপাদন শুরু করতে পারছে না চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলো। অনাবৃষ্টির কারণে তীব্র খরায় নতুন কুঁড়ি বা পাতা গজানো দূরে থাক, খরার তীব্রতায় গাছের পুরনো পাতাগুলোও শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সবুজ বাগানগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, সবগুলোরই ‘প্রুনিং’শেষ হয়ে গেছে। গাছের নিচ পরিস্কার করে বাড়তি যত্ন নেয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নতুন চারা লাগানোর কাজ চলছে। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় এখন কোন সবুজের দেখা নেই। তবে কোন কোন চাগানে এখনও শ্রমিকদের বাড়তি পরিচর্যা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার বাগানগুলোতে বিভিন্ন ধরণের কিটনাশক স্প্রে করছেন। ফটিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৭টি চা বাগানের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাগানে রয়েছে নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে হালদা ভ্যালী বাগান শতভাগ সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে। এ বাগানে স্থাপিত ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইনের মাধ্যমে পুরো প্লান্টেশনে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রিংকলের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে পুরো খরা মৌসুম মোকাবেলা করেন বাগান কর্তৃপক্ষ। ফলে খুব কমই ক্ষতির সম্মুখিন হয় বাগানটি। কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় এ ধরনের ব্যবস্থা অন্য বাগানগুলোতে নেই। বড় বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। জানা যায়, প্রচ- খরায় বাগানের জলাশয়ও শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পের মাধ্যমেও পানি তোলা যাচ্ছে না। ফলে কোনো কোনো বাগানে ব্যবস্থা থাকলেও পানির অভাবে সেচ দিতে পারছে না। গত নভেম্বর মাস হতে অদ্যাবধি বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটাও পড়েনি এ অঞ্চলে। দিনে প্রচ- রোদে তাপমাত্রা ৩৭-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকছে। এ অবস্থায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মাটি শুকিয়ে যেন ইট হয়ে যাচ্ছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষরা জানান, এ খরায় সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্লান্টেশনে রোপন করা চারা গাছ (ইয়ংটি) এবং বাগানের নার্সারির চারা। এছাড়া ক্লোন গাছগুলোও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এ গাছগুলোর শিকড় নিচের দিকে বেশিদূর যায় না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বাগানগুলোতে অনেকটা হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। মালিক-শ্রমিক সকলেই আকাশের দিকে চেয়ে আছেন বৃষ্টির আশায়। ব্র্যাকের মালিকাধীন কর্ণফুলী চা বাগানের ডিজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ মাসের অধিক সময় ধরে চলা অনাবৃষ্টি এবং তীব্র খরায় বাগানগুলোর প্রায় ২৫ ভাগ ইয়ং টি গাছ রোদে শুকিয়ে মরে গেছে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হলে হয়তো জুন-জুলাইয়ে স্বল্প পরিমাণে উৎপাদনে যেতে পারবে বাগানগুলো। নেপচুন চা বাগানের ম্যানেজার কাজী ইরফান উল্লাহ বলেন, গত বছর জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় এক দশমিক ৬৯ মিলিমিটার। কিন্তু এ বছর ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছিঁটেফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি।