সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দীর্ঘদিনের অবহেলিত জনপদের নাম সলপ ইউনিয়ন। শিক্ষা-দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে ছিল অবকাঠামো উন্নয়নে এ জনপদের মানুষ। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার আন্তরিকতায় ইতিমধ্যে পরিকল্পিত নানামুখি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বদলে গেছে সলপ ইউনিয়নের অধিকাংশ জনপদের চিত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার – প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। এই শ্লোগানকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান সলপ ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সরকারের প্রতিটি জনপদের অধিকাংশ রাস্তাঘাটগুলো ইতিমধ্যে নতুনভাবে নির্মাণ ও পাকা করে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুসম উন্নয়ন করেছেন। অবহেলিত জনপদের রাস্তাঘাটগুলো পাকা হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। নদী, খাল-বিলের পারাপারে নির্মিত হয়েছে ব্রীজ ও কালভার্ট। সারা ইউনিয়নে একশো ভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তার বাঁকে বাঁকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদ, মন্দির ও মাদ্রাসায় বসেছে সৌর বিদ্যুতের আলো ও পাকা বেঞ্চ। যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নে এলাকার কৃষক অতি সহজেই তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নিতে সক্ষম হচ্ছে। সমৃদ্ধ হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য সংস্কার করা হয়েছে প্রতিটি খেলার মাঠ। নির্মিত হয়েছে শেখ রাসেল মিনি ইনডোর ষ্টেডিয়াম। শিশু-কিশোর ও বিনোদন প্রেমীদের জন্য ইউনিয়নের সোনতলা সেতুর পূর্বপার্শে তৈরি হচ্ছে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি আধুনিক পর্যটন পার্ক। উন্নয়নের প্রতিটি কর্মকান্ড বাস্তবায়নে এলাকাবাসীর মতামতকে দেওয়া হচ্ছে অধিক গুরুত্ব। ফলে মানুষ গ্রামের ঘরে বসেই পাচ্ছে শহরের সকল সুযোগ সুবিধা। যা গত ৫ বছর পূর্বেও কেউ চিন্তা করতে পারতো না। স্থানীয় জনসাধারন জানান, কয়েক বছর পূর্বেও সলপ ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অতি নাজুক। কাচা রাস্তা ছাড়া চলাচলের কোন ধরনের পথ ছিল না এলাকার জনগনের। যুগের পর যুগ ছিল অবহেলিত। সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই পথে-ঘাটে চলাচল দায় ছিল। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য ঘরে তুলতে ও বাজারে বিক্রিতে চরম দুর্ভোগ পোহাত। স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় তারা যাতায়াতে খুবই কষ্ট পেত। সলপ ইউনিয়নের কৃতি সন্তান তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোটে নির্বাচিত হন। তারা উভয়ে অবহেলিত সলপকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সব সেক্টরে ভৌত অবকাঠামো নিমার্ণের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে ইউনিয়নের সর্বত্র। পাল্টে যাচ্ছে অবহেলিত জনপদের সাধারন মানুষের ভাগ্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সলপ ইউনিয়নে বিভিন্ন উন্নয়নের ছোয়ায় বদলে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ এলাকার রাস্তাঘাট। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ইউনিয়নের সলপ ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনতলা তফছির মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিগ্রিরচর মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন, রামনগর মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সলপ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, নলসোন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে শিক্ষাকে অগ্রগামী করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনিয়নের সোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, শ্রীবাড়ি হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, নলসোন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, কোনাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, কানসোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ ৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যুগোপযোগি শিক্ষায় বদলে দেওয়া হয়েছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আগামী ভবিষৎ উজ্জীবিত হয়েছে। আরো ১২ টি জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবণ নির্মাণের দাবি ইউনিয়নবাসীর। ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও পড়েছে সাড়া – নতুন নির্মিত কয়েকটি পাকা সড়কের মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় সোনতলা শ্রমিক অফিস থেকে সোনতলা নতুনপাড়া কবরস্থান হয়ে তারাবাড়িয়া পর্যন্ত সাবমার্জিবল পাকা সড়ক নির্মাণ, ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহবাজমোড় থেকে ডিগ্রিরচর হয়ে ইব্রাহিমের মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ, ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনতলা রজব দেওয়ানের বাড়ী থেকে ভায়া নেওয়ারগাছা ঘাট হয়ে সোনতলা উত্তরপাড়া এদেল সরকারের বাড়ী পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষকগঞ্জ বাজার চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ী হয়ে নলসোন্দা বাজার পর্যন্ত সাবমার্জিবল পাকা সড়ক নির্মাণ, একই সড়কে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। নলসোন্দা গাছপাড়ায় নদীর উপর প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ মিটার দীর্ঘ ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। উল্লাপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগ সড়কগুলো নির্মাণ করছে। ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক ও জনপদের একমাত্র রাস্তা উপজেলার পাইকপাড়া হইতে বেলকুচি হয়ে কড্ডার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করে মেজর মেইনটেইজ করার দাবি এলাকাবাসীর। ইউনিয়নের কৃষকগঞ্জ বাজারে পরিষদ ভবনকে করা হয়েছে আধুনিকায়ন। পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মিত হওয়ায় ঝলমল করছে ভবনটি। জ্ঞান পিপাসুদের জন্য আলোকময় হয়ে আছে তানভীর ইমাম বীরমুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার। সোনতলায় বরেণ্য বীরমুক্তিযোদ্ধা এইচটি ইমাম স্মরণে একটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও এমপি মহোদয়ের নিজ গ্রাম সোনতলায় ১০ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইউনিয়নে ১৭ টি কাচা গ্রামীণ রাস্তার মধ্যে ১১ টির সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পরিষদের অর্থায়নে একাধিক ব্রীজ -কালভার্ট নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট মেরামত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানের পূনঃ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ২৫০ টি সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও কমিউনিটি কিনিকগুলোতে প্রদান করা হয়েছে প্রয়োজনীয় উপকরণ । কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণসহ বেকার যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ ও সেলাইমেশিন সহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে। সামাজিক বেষ্টনির আওতায় মাননীয় এমপি মহোদয়ের বিশেষ নজরদারিতে ৯৪০ জনের মধ্যে বয়স্ক ভাতা, ৪২২ জনের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা ও ৩০৯ জন বিধবা ও অস্বচ্ছল পরিবার সহ ১৭০১ জন সুবিধা ভোগির মধ্যে বিভিন্ন ভাতার কার্ড প্রদত্ত হয়েছে। আরো ১ হাজার ৫ শত সুবিধা ভোগির কার্ডের দাবি এলাকাবাসীর। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনমুলক সভা, সেমিনারসহ প্রধানমন্ত্রী ও এমপি মহোদয়ের দপ্তরের প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে বারংবার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে কথা হলো কৃষকগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার, জনতা বাজারের দোকানি সেলিম মিয়ার সাথে। তারা জানান, চেয়ারম্যান শওকাত ওসমান জনগনের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পণা গ্রহন করেন। চেয়ারম্যানের সেই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রুপ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। অবহেলিত জনপদের উন্নয়নের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন সংসদ সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান। তাদের সম্বনয়ে একের পর এক উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রতিটি জনপদে। রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল বিভাগে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। সলপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান জানান, সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা তানভীর ইমামের সার্বিক সহযোগিতায় ও দিক নির্দেশনায় এ জনপদের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি “প্রতিটি গ্রাম হবে শহর” তা বাস্তবায়নের জন্য জনগনকে পাশে রেখে তাদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। গৃহিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সলপ একটি মডেল ইউনিয়নে পরিণত হ্েব ইনসাল্লাহ।