জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সব ধরনের অপচেষ্টা করা হয়েছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর এমন একটা সময় ছিলো, যখন কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এ কথা বলার সাহস পেতো না। তার (বঙ্গবন্ধুর) দল (আওয়ামী লীগ) যখন সরকারে এসেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে গণভবনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা যাতে এগিয়ে যায়, দেশের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, সেটাই সব সময় আমরা চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ এইটুকু বলতে পারি, আমার সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল, আমরা স্বাধীন জাতি, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, কাজেই আমরা সব সময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো, কারো কাছে হাত পেতে না, করুণা ভিক্ষা করে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিলো বলে মন্তব্য করে তিনিবলেন, আমি জানি না, একটা স্বাধীন জাতি বা স্বাধীন দেশের নাগরিক, যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে, তারা কীভাবে আবার পরাজিত শক্তির পদলেহন করতে পারে? এটা আমি ভাবতেও পারি না। কিন্তু সেই অবস্থাতেই বাংলাদেশকে কিন্তু নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
স্বাধীনতা পদক পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুসরণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্মকে জাতির কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আর আমি এটাই চাই যে, আপনাদের (পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ) পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, স্ব স্ব কর্মস্থানে তারা নিশ্চয়ই তাদের মেধা, মননে যোগ্য একটা অবস্থান করে নেবে এবং দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছু অবদান রেখে যাবে। সেটাই আমরা চাই। অন্তত আপনাদের কাছ থেকে তারা উৎসাহ পাবে। দেশের জন্য, জাতির জন্য, জাতির কল্যাণের জন্য তারা কাজ করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ হাতে গোনা কয়েকজনকে পুরস্কার দেওয়া হলেও সমাজের আরো অনেককে তাদের অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া উচিত। কারণ, সমাজের বহু ক্ষেত্রে অনেক অবদান তারা রেখে যাচ্ছেন। তাদের পুরস্কৃত করতে পারা মানে আমরা আমাদের জাতিকে পুরস্কৃত করি, নিজেদের পুরস্কৃত করি। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ পেয়েছেন নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান।
গণভবনে এসব গুণীজনদের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন, তাদের স্বজনদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে আহসানউল্লাহ মাস্টার, আখতারুজ্জামান বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম বজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্রকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও নাট্যজন আতাউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী এবং সমাজসেবা বা জনসেবায় অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন এ বছর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
এছাড়া গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার।