আজ বুধবার (২ জুন) শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। এর আগে দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত করেছে, শনাক্ত হয়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন)। করোনার এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মাথায় রেখে অধিবেশন উপলক্ষে ৫৬টি প্রস্তুতি নিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে—এমপি-মন্ত্রীদের তিন দিন পরপর করোনা টেস্ট করা, অধিবেশন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকসহ সবারই করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা এবং যারা অধিবেশন কক্ষে থাকবেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করা। এছাড়া সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সংসদ চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কর্তব্যরত সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, ছুরি বা চাকু অথবা এমন কিছু, যা মানুষের জীবননাশের কারণ হতে পারে, তা বহন করতে পারবেন না। সবাইকে পরতে হবে দুটি করে মাস্ক।
চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ১৩তম ও বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সম্প্রতি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আমরা বৈঠকে ৫৬টি প্রস্তুতি নিয়েছি।’
আজ বুধবার (২ জুন) সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হলেও বাজেট পেশ হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন)। চলবে ১২ কার্যদিবস।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, অধিবেশনকে ঘিরে নানা নিরাপত্তা ও সুরক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন সংসদে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা যন্ত্রপাতিসমূহ কার্যোপযোগী আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চেম্বারের সম্মুখে এবং ভিআইপি গ্যালারিতে স্থাপিত আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টরগুলো অপারেট করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংসদ ভবনের প্রধান ফটকসহ সংসদ এলাকা ও সদস্য ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সংসদ কক্ষসহ ভবনের অভ্যন্তরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা এবং সংসদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র দৃশ্যমান অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া সংসদ অধিবেশনের সময় নিয়োজিত বার্তাবাহকরা নিজেদের কাছে অবশ্যই ছবিসহ পাস সার্বক্ষণিক সংরক্ষণ করবেন। তারা পাস দৃশ্যমান রাখবেন যেন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচিতি নিশ্চিত হওয়া যায়।
পরিচয়পত্রবিহীন কোনো ব্যক্তি, সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে না পারে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া অধিবেশনকালীন প্রবেশ পাস চেক করার দায়িত্ব এসবি’র ওপর ন্যস্ত থাকবে। এ বিষয়ে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস সার্বিক সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। সংসদে আনীত খাদ্য সামগ্রী ও মালামালের সঙ্গে অবৈধ কোনো জিনিস যেন সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে না পারে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংসদ ভবনের প্রধান ফটকসহ সংসদ এলাকা ও সদস্য ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সংসদ কক্ষসহ ভবনের অভ্যন্তরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সংসদ ভবন সংলগ্ন এলডি হল চত্বরে প্রায়ই বিয়ে বা এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। আসন্ন অধিবেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এলডি হলে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য মালামাল আনা-নেয়া করলে আগেই বিষয়টি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ও সদস্য ভবনে কর্মরত পুলিশ পরির্দশককে জানাতে হবে। এসব অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শন করে কেবল মনিপুরী পাড়া রাস্তা/গেইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীরা কোথায় কখন ডিউটি করবেন তার একটি তালিকা গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসকে সরবরাহ করবেন।
সংসদ ভবনে অবস্থিত ভিআইপিদের অফিস কক্ষগুলোতে ব্যবহৃত আসবাবপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। কক্ষ সমূহের টেলিফোন সেট সচল রাখা, বিজলি বাতি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
সংসদের অধিবেশন চলাকালে সংসদ কক্ষের মাইক্রোফোন সিস্টেম সার্বক্ষণিক ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য প্রতিদিন অধিবেশন শুরু হওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে পরীক্ষা করতে হবে।
সংসদ চলাকালে কর্তব্যরত কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ করতে পারবেন না। ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম ও রেকর্ডিং পদ্ধতি সচল রাখতে হবে।
অধিবেশন চলাকালে কোনো ফেরিওয়ালা বা অবাঞ্ছিত লোক যেন সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন সড়ক এবং খেজুর বাগান এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্সেস মোতায়েন থাকবে।
অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনের সব লিফট চালু রাখা নিশ্চিত করতে হবে। অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই সব লিফট পরীক্ষা করে ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে।
সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক বাতি পরিদর্শন করে ড্রাইভওয়ে ও টানেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর রাখার জন্য হ্যালোজেন লাইট রাতে সার্বক্ষণিক প্রজ্জ্বলিত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য সব ভিভিআইপি-ভিআইপিদের কক্ষসমূহ যেন ইঁদুর দ্বারা সারা বছর আক্রান্ত না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
যেসব স্থান থেকে পানি পড়ে তা মেরামত করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নাখালপাড়া সদস্য ভবন এলাকা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউস্থ সদস্য ভবন এলাকা এবং সংসদ ভবন এলাকা পরিষ্কার, সংসদ ক্যাফেটেরিয়ার প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিন যথাযথভাবে পরিষ্কার বা অপসারণ করতে হবে। ক্যাফেটেরিয়ার বর্জ্য কোনো অবস্থায় লেকে ফেলা যাবে না। অধিবেশন চলাকালে সংসদ কক্ষে এবং সংসদ ভবনের ভিআইপি কক্ষগুলোর ঘড়িসমূহ যেন সঠিকভাবে একই সময় নির্দেশ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ কক্ষের ডিজিটাল ঘড়ি ঠিক রাখতে হবে। অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনসহ সদস্য ভবনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ, পানির মজুত রাখা এবং সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা ও ব্যবহার উপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সি যথা—টিভি, রেডিও, পিআইডি প্রভৃতি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি/সাংবাদিক ক্যামেরা, ক্যাসেট এবং ব্যাগসহ সংসদ কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সংসদ অধিবেশন কার্যক্রমের ‘লাইভ’ প্রচারসহ বিভিন্ন সময়ে প্রচারের জন্য ‘সংসদ বাংলাদেশ’ চ্যানেল কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার সংসদ অধিবেশন প্রচারের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংসদ ভবনের নির্ধারিত স্থানে বিটিভির অপারেশনের নিকটতম স্থানে স্থাপন করবে।
সংসদ অধিবেশন চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহে যেন কোনো ধরনের বিঘœ না ঘটে সে বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৭ যৌথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংসদ এলাকার প্রবেশপথে স্থাপিত চেকপোস্টগুলো সার্বক্ষণিক অপারেট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধিবেশনকালীনসহ অন্যান্য সময়ে সংসদ ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের চেকপোস্টের কাছে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
অফিস ও অধিবেশন চলাকালে নিয়মিত জেনারেল টয়লেটসমূহ পরিষ্কার করতে হবে। জরুরি কাজ সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মীকে কন্ট্রোল রুমে রাখতে হবে।
সংসদ ভবনের ড্রাইভওয়েতে কেবল প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি অবস্থান করতে পারবে। স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতার গাড়ি নির্ধারিত স্থানে থাকবে। সংসদের উত্তর প্লাজা দিয়ে ভিআইপিদের পতাকাবাহী গাড়ি ব্যতীত অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
অধিবেশনকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স (অক্সিজেন সুবিধাসহ) সার্বক্ষণিক মোতায়েন রাখতে হবে। সংসদের মেডিকেল সেন্টারে সব সুবিধা থাকবে। অধিবেশনকালে সচিব লবিতে একজন চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাটেনডেন্টসহ স্ট্রেচার নিয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সংসদ ভবন, সদস্য ভবন, সংসদ ভবন সংলগ্ন আবাসিক এলাকা এবং সংসদ এলাকার মশা নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রদান করতে হবে। মশা নিধনের জন্য ওষুধ/ কীটনাশক স্প্রে’র কাজ প্রতিদিন বেলা ১১টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এসব এলাকার বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর/স্টেরিলাইজকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে চলাচলকারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ডিসি ট্রাফিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সংসদ অধিবেশনের প্রাক্কালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান ও আশেপাশের জায়গা ‘ডগ স্কোয়াড’ দ্বারা সুইপিং করতে হবে।
অধিবেশনকালে একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সার্বক্ষণিক মোতায়েন রাখা হবে। সংসদ ভবনে রক্ষিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস বরাবরের মতো একটি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করবে। সংসদ ভবনে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো পরিচালনা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। কোনো এক্সটিংগুইসার নষ্ট বা অচল থাকলে গণপূর্ত বিভাগ তা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, শেরেবাংলা নগর, নাখালপাড়াস্থ সদস্য ভবনে প্রতিদিন দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জাতীয় সংসদ ভবনের সব অফিস কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংসদ কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের করোনা পরীক্ষা করতে হবে এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। (তারা গত ২৮ মে থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন)।
সংসদ অধিবেশনের দিনগুলোতে এমপিদের সঙ্গে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। ওই দিনগুলোতে কোনো অতিথিও ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। যদি সাংবাদিকদের গ্যালারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করার অনুমতি দেয়া হয়, তবে তাদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে এবং উক্ত পরীক্ষার নেগেটিভ সনদসহ সংসদে প্রবেশ করবেন।
এছাড়া, সংসদ অধিবেশন চলাকালে সচিব লবিসহ সংসদ ভবনের নিচতলায় ভিআইপিদের চিকিৎসাসেবার জন্য যেসব চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান দায়িত্বপালন করবেন তাদেরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে এবং পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত স্থানে সরবরাহকৃত খাদ্য সামগ্রীর উপযোগিতা যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হবে।