মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আমানত ও ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের পর্যবেক্ষণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) আমানত ও ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালতে না নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে অবসায়ন করা যায় কিনা, সে বিষয়ে উপায় বের করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রস্তাবিত ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন-২০২১’-এর খসড়ায় আরো কিছু পর্যবেক্ষণ যুক্ত করার বিষয়টি জানিয়েছেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন-২০২১’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খসড়াটি উপস্থাপন করে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৯৩-এর পরিবর্তে নতুন আইন হচ্ছে। নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করতে ১৫-১৬ শতাংশ সুদ দেয়ার ঘোষণা দেয়। যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) এমন কার্যক্রমে অনেকে সর্বস্ব হারায়। তাই এক্ষেত্রে ক্যাপ বা সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া যায় কিনা, সর্বোচ্চ কত অর্থ জমা রাখতে পারবে এবং মানুষ যেন যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারে, সেজন্য সুদহারও নির্ধারণ করে দেয়া যায় কিনা—এসব বিষয় আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তিনি আরো বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাজনিত কারণে কিংবা কারো সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণখেলাপি হিসেবে কারা বিবেচিত হবে, তা বলে দেয়া হয়েছে খসড়া আইনে। আগের আইন অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানগুলো ইনস্টিটিউট হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন তারা কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে এজন্য নতুন করে সেগুলোকে নিবন্ধন নিতে হবে না। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েও কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কেউ দেউলিয়া হয়ে যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ডিপোজিটের ব্যবস্থা থাকবে। দেউলিয়া করার বিষয়ে বর্তমান আইন অনুযায়ী হাইকোর্টে যেতে হয়। মন্ত্রিসভা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, আদালতের বাইরে এটি ফয়সালা করা যায় কিনা। তাহলে সময় ও ভোগান্তি কমে যাবে। আদালতে গেলে দীর্ঘদিন মামলা চলবে। এরপর হাইকোর্টে যেতে হয়। আপিল বিভাগে গেলে আবার রিভিউ করতে হবে। তাই এটা যদি আদালতের বাইরে করা হয়, তাহলে একটা যুগান্তকারী দিক হবে।
খসড়া আইন অনুযায়ী নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল হবে। অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের জন্য পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও বিচার চলবে।
খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিষয়ে আইনের ধারা ৩০-এ বলা হয়েছে, খেলাপি বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিতকরণ ও সিআইবিতে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে ফাইন্যান্স কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্র পরিপালন করবে। ঋণখেলাপিকে দেউলিয়া ঘোষণা করার লক্ষ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানি স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতে আবেদন করবে বা আবেদন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নির্দেশ দেবে। ঋণখেলাপির অনুকূলে কোনো ঋণ দেবে না ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকাভুক্তিও এক মাসের মধ্যে বকেয়া ঋণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি প্রচলিত আইন অনুসারে সব আইনগত ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা সরকারের কাছে পাঠানোর পর তাদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি ও বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নতুন কোম্পানি নিবন্ধনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ করবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সম্মাননা বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবে। এছাড়া পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটিতে কোনো পদ পাবে না।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে খসড়া আইনের ধারা ২৬-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারবে। এছাড়া কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি ভিন্ন কোনো কোম্পানিতে তার পরিশোধিত মূলধন বা রিজার্ভের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার অর্জন বা ধারণ করবে না।
এক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে, এ আইন কার্যকরের পাঁচ বছরের মধ্যে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আরো তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেক কোম্পানি অন্য কোম্পানির অর্জিত শেয়ার বা ধারণকৃত শেয়ার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নামিয়ে আনবে। এছাড়া নতুন আইনে বলা আছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ বা আমানতকারীদের স্বার্থ পরিপন্থী পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত করা হবে।
পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, অন্যূন তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা ১৫-এর বেশি হবে না।
আইনের খসড়ার ১৫ ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের বিষয়ে বেশকিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি বিধিতে দ-িত হলে কিংবা জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যবিধ অবৈধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন কেউ ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হতে পারবেন না।
নতুন আইনে পরিচালকদের প্রসঙ্গে বলা হয়, কোনো পরিচালক টানা তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে তৃতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ওই কোম্পানির পরিচালক পদে পুনর্র্নিবাচিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। যদিও এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কেউ টানা তিন মেয়াদে পরিচালক পদে থাকলে আইনটি কার্যকরের পর তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচালক পদ শূন্য হবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত ও পুনর্গঠন প্রসঙ্গে আইনে বলা হয়, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাইলে কিংবা নিজের ব্যবসার কিয়দংশ অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানি অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বা বিদ্যমান দায়-সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই কোম্পানি অবসায়নের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com