বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল মৌসুমী সুস্বাদু ফল তাই ফলের রাজা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার সর্বত্র কাঁঠাল গাছ রয়েছে, গাছগুলোতে ঝুলন্ত অবস্থায় কাঁঠালগুলোকে ঝুলে তাকতে দেখা যায়। এ ভরা মৌসুমে প্রতিটি গাছে কাঁঠাল পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। কাঁঠাল গাছগুলোতে রয়েছে কাঠবিড়ালির আনাগোনা। কাঁঠাল বর্ষাকালীন মৌসুমী ও অর্থকরী ফসল। আর সেই লক্ষে বাগান মালিকরা খুশিতে আত্মহারা। কাঁঠালের বীজ থেকে চারা জন্মায়, প্রতিটি গাছ ৩ বছর পর থেকে একনাগারে স্থান ভেদে ৬০/৭০ বছর ফল দিয়ে থাকে। জানুয়ারীর শেষ ভাগে কাঠালের মুছি আসতে শুরু করে, জাত ভেদে ১২০ দিন থেকে ১৫০ দিন সময় লাগে পরিপক্ক হতে। কাঁঠালের তেমন কোন রোগবালাই নেই, অল্প মুচি ঝরা রোগ সামান্য কিছু গাছে দেখা যায়. বড়রকমের কোন রোগবালই নেই তাই এতে কিটনাশক ও বিষ প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন হয় না। সময়মতো সার ও পানির ব্যবস্থা করলে ভাল ফলন আশা করা যায়। তেমন যতœ করতে হয় না শুধুমাত্র চারা গাছ গৃহপালিত পশুর হাত রক্ষা করতে বেড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ উপজেলায় সেই আদিকাল থেকে কাঁঠালের আবাদ হয়ে থাকলেও অন্যান্য ফলের আবাদ নিয়ে সরকারি ভাবে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, কাঁঠাল নিয়ে তার তেমন তৎপরতা নেই, ১২০ টি বাগান সহ মোট ৩১৫ হেক্টর ভুমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতি হেক্টর ভুমিতে ১১ মেট্রিকটন কাঁঠালের উৎপাদন আশা করা যায়। বাজার দর প্রতি মেট্রিকটন ২৪০০০ টাকা। এলাকার ব্যবসায়ীরা, গাছের মালিক থেকে কাঁঠালের মুচি আসার পর পরই বাগান কিনে নেয় ও বেশী লাভের আশায় ইচ্ছা অনুসারে বাজারজাত করে থাকে। কাদামাটি ও জলাবদ্ধ এলাকায় কাঁঠাল গাছের অনুপযোগী স্থান, তাই পাহাড়ি লাল বেলে মাটি কাঁঠাল গাছের জন্য খুই উপযোগী,এ অঞ্চলের কাঁঠালের স্বাদ অন্যান্য এলাকায় চেয়ে বেশি হওয়ার তার কদর ও বেশি। উপজেলার সর্বত্র কাঁঠালের গাছ চোখে পড়লেও বিষ্ণুপুর.চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল, পাহাড়পুর, হরষপুর ইউপিতে বেশী আবাদ হয়ে থাকে, এখানে দেশীয় জাতের কাঁঠালের আবাদ হয়ে থাকে অতি সামান্য পরিমান বারোমাসি কাাঁঠাল দেখো যায়। উপজেলার সব বাজারে কাঁঠালের হাট বসলেও পাইকারি কাঁঠাল বেচাকেনার হাট সিংগারবিল ইউনিয়নের মিরাশানি বাজার, সিঙ্গারবিল বাজার, চম্পকনগর ইউপির চম্পকনগর বাজার, বিষ্ণুপুর ইউপির রানওয়ে বাজার, ও পাহাড়পুর ইউপির আউলিয়া বাজার, হরষপুর ইউপির দেওয়ান বাজার। এ সব বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কাঁঠাল ক্রয় করে বিভিন্ন যানবাহনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কাঁঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়, কাঁঠাল খাওয়া শেষে এর বিচি তরকারিতে সমান ভাবে সমাদ্রিত, কাঁঠালের চামড়া গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কাঁঠাল গাছের কাঠ হলুদ রঙ্গের, মজবুত কাট ঘরের আসবাবপত্র তৈরীতে সেরা। এলাকার জনগণের সাথে কথা বলে জানাযায়, সকালে কাঁঠালের মিষ্টি রস পান্তা ভাতের সাথে খাওয়ার মজাই আলাদা। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁঠালের প্র্রকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রয় হয়ে থাকে। বিক্রয় ভাল,দাম ও ভাল। উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার, নুরে আলম জানান, এখানকার কাঁঠালের ভেতরের কোষ ৩ প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন রসালো, চাউলা ও নরম, কাঁঠালের রোগ বালাই কম তাই এ বছরও এর ভাল ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জুনায়েদ আল সাদী জানান, পাহাড়ি লাল বেলে মাটি কাঁঠালের জন্য খুবই উপযোগী, তাই এর ফলন ও আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার, মো: খিজির হোসেন প্রামাণিক জানান, বাগানের মালিকদের সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ, কাঁঠালের বাম্পার ফলন ও ন্যয্য দাম পাওয়ায় কৃষক খুসি তাই আমরাও খুশি।