করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সাত জেলায় নতুন করে লকডাউন দেয়া হয়েছে। এতে কোনো প্রকার গণ পরিবহন নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রথম দিনে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে দুই শতাধিক যানবাহন ফিরিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল থেকে মহাসড়কের সাতটি পুলিশের তল্লাশি চৌকি ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, মদনপুর, রূপগঞ্জের তারাব, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল, সোনারগাঁয়ের মেঘনা, আড়াইহাজারের পুরিন্দা ও রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলে এ তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়। তাছাড়াও পুলিশ র্যাব বিভিন্ন স্থানে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় সকাল ৬টা থেকে অবস্থান নেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রেজা মাসুম বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় লকডাউন কঠোরভাবে পালনের জন্য সাইনবোর্ড এলাকায় জেলার অভ্যন্তরে প্রবেশ ও বের হওয়ায় মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলার অভ্যন্তরে কোনো পরিবহন আমরা ঢুকতে দিচ্ছি না। এপর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ যানবাহন ফিরিয়ে দিয়েছি। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাতটি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। লকডাউন না মানার কোনো সুযোগ নেই। জীবনকে আগে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি পালন করতে হবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে সব রকম গণ পরিবহন এবং দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবা যেমন ওষুধ, জরুরি খাদ্য, কৃষি ও শিল্প উপকরণ পরিবহন লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে।
সাভার থেকে রাজধানীতে ঢুকছে না গণপরিবহন, হাজারো মানুষের দুর্ভোগ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে ঢাকার আমিনবাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না গণপরিবহন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
কর্দমাক্ত পথে হেঁটে, বৃষ্টিতে ভিজে, চরম দুর্ভোগকে সঙ্গী করে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রাজধানীতে যাচ্ছেন হাজারো মানুষ। এদের বেশিরভাগই যাচ্ছেন কর্মস্থলে। এদিন সকাল থেকেই সাভারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে এই চিত্র। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুর ও আমিনবাজারে দায়িত্বরত পুলিশ রাজধানীতে কোনো গণপরিবহন প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি মাথায় করে পায়ে হেঁটে রাজধানীর দিকে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল জনস্রোত। সড়কে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে ঢাকাগামী লেনে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যাচ্ছিলেন স্থানীয় শ্রমিক নেতা খাইরুল ইসলাম মিন্টু। তিনি সকালে সাভারের একটি গণপরিবহনের করে ঢাকার পথে রওনা হয়েছিলেন। কিন্ত পথিমধ্যে হেমায়েতপুর পার হওয়ার পরেই তাদের বাস থামিয়ে সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে হাঁটা শুরু করেন মিন্টুও।
এই শ্রমিক নেতা বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন ইউটার্নে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো ইউটার্নে পরিবহন থামিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সকাল থেকে হাজারো মানুষ এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাঁটতে গিয়েও নানা সমস্যা। একে তো বৃষ্টি, তার ওপর সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের লকডাউন জনগণের ভোগান্তি ছাড়া কিছুই না। সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই এমনকি গাজীপুরেরও অনেকের কর্মস্থল ঢাকার ভেতরে। যারা গাজীপুর বা সাভারে থেকে ঢাকায় কাজ করেন তাদের জন্য এটি চরম দুর্ভোগ। এ ধরনের লকডাউন আমাদের কোনা কাজে লাগে না। বরঞ্চ কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। রাজধানীতে বেসরকারি অফিসে কর্মরত আশিক বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে বাসে করে আমার অফিসে যাই। আজ সকালে বের হয়েছি, হেমায়েতপুরের পরেই বাস থেকে আমাকে নামিয়ে দেয়। পরে হেঁটেই অফিসে যেতে হয়েছে। সঙ্গে ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছি। আর অফিসে পৌঁছাতেও দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে সাভার জোনের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আব্দুস সালাম বলেন, ‘সকাল থেকেই ডিএমপি থেকে পরিবহন ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ রয়েছে যেন উল্টো পথে কোনো পরিবহন ঢুকতে না পারে। তবে আমরা কোনো পরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছি না।’