মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় করোনার বাধা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১

মহামারি আকার ধারন করা করোনা ভাইরাস ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। সারাদেশের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এখন করোনা সংক্রামন ঠেকানোর কাজে পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রায় প্রতিদিনই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ৯ জেলার ২৭ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। সরকারের পক্ষ থেকে ঘুর্র্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নির্মাণ, মেরামত, কৃষিবীজ বিতরনসহ সরকারি সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌছে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো ঠিকমতো করা যাচ্ছে না করোনার কারণে। সরকারের উপর মহলের নির্দেশ হচ্ছে- যে কোনো ভাবে হোক, করোনার বিস্তার রোধ করতে হবে। এর জন্য জেলায় কর্মরত বিশেষ কমিটির পরামর্শে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এবং মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। জেলায় জেলায় চলছে লকডাউন। লকডাউন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তাও তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের উপর দিয়ে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হলো- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়ীয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, ঈবারহানউদ্দিন, ঈভালা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর। জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস বয়ে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। এসব জেলার মধ্যে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনায় লকডাউন চলছে। পাশাপাশি সারাদেশে শাটডাউনের চিন্তাভাবনাও চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনও সময় এই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রামনের হার কমানোর কোনও বিকল্প দেখছে না সরকার। সরকারের এই ভাবনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শতভাগ সফলতা অর্জনের বিষয়টি নির্ভর করছে জেলা প্রশাসকদের কর্মতৎপরতার ওপর। জেলা প্রশাসকরাও এই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জেলা প্রশাসক।
নাম উল্লেখ না করার শর্তে একজন জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে করোনা নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নাই। যদি এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তাই আমাদের সকলের দৃষ্টি সেদিকে। আমরা কাজ করছি। তবে আপাতত ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজটি কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, করোনা সংকট কেটে গেলে আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ওইসব কাজে ঝাপিয়ে পড়বো।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একই সঙ্গে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে এসব জেলার ২৬ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশের ১৬ জেলার ৮২ উপজেলা এবং ১৩ পৌরসভায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাব পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ লাখ মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ঘরবাড়ি এবং মারা গেছে নয়জন। গত ০৩ জুন দুর্যোগ কবলিত জেলা ও উপজেলা স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইয়াস’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়ায় বাঁধ, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। ক্ষতির মুখে পড়ে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ।
‘ইয়াসে’ সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। এই জেলায় ৯৪ হাজার ৮৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরার আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর উপজেলার পৌনে ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে। এছাড়াও ছয় হাজার ৭৩৮ হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় ২৪ হাজার ৯১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানে ৬৯০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বরগুনায় বিভিন্ন উপজেলার ১৭ হাজার ৩২০ জন মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় এক হাজার ৮০০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলায় সাত হাজার ৭৩০টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং তিন হাজার ৫৭৯টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্সবাজারে ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুই হাজার ৪৭০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনীতে ২০০ বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠির এক লাখ ৪৯ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টি। খুলনার চার উপজেলায় দুই হাজার ২৪০টি ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার মানুষ। লক্ষ্মীপুরে ২২ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, বরিশালের ১০ উপজেলা এবং ছয় পৌরসভার এক লাখ ২৭ হাজার ১৬২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উলে¬খ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশালে এক হাজার ২০০ ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরায় প্রভাবে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ২৬০ জন মানুষ। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের সব ডিপার্টমেন্ট মিলে ডি-ফরমে চূড়ান্ত হিসাব পাঠাবে। সেই হিসাবটাই মূলত বিবেচনায় নেয়া হবে। বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com