উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আর কয়েক দিনের টানা বর্ষনে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলসহ নিম্ন এলাকার বসবাসরত সাড়ে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। কোলকোন্দের বিনবিনা চরে স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধটি বিলীন হয়ে গেছে এবং লক্ষীটারীর কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমের উপবাঁধটি ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের ৬ পরিবারের বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ। পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির। অনেকে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে, আবার কেউ ঘরের বিছানার উপড়ে জিনিষপত্র রেখেছে। পানিবন্দি মানুষজন বয়স্ক ব্যাক্তি, শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ছোট নৌকা ও বাঁশের ভেলায় কেউ কেউ চলা করছে। লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ন, পূর্ব ইচলির ১ হাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরসহ নিম্ন এলাকার ১ হাজার ৫শ, নোহালীর মিনার বাজার, কচুয়াচর, বৈরাতী বাাঁধের ধার, চর নোহালী, বাগডহরা চরের ৫শ, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়াচর, তালপট্টি, আলাল চর, নরসিং চরের ৫শ, গজঘন্টা ইউনিয়নের কালির চর, ছালাপাক, গাউছিয়া বাজার, জয়দেব, মইশাসুর, রামদেব চরে ৫শসহ আলমবিদিত ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের তিস্তা বেষ্টিত নিম্ন এলাকার ৫শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল রবিবার সরজমিনে গেলে বাগেরহাট আশ্রয়নের বাসিন্দা জরিনা, হালিমা, সুলতানা, মাজেদা, রুজিনা, সজিনা জানান, গত ৬/৭ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে অতিকষ্টে আছেন। কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি। কেল্লার পাড়ের মহির উদ্দিন জানান, কষ্ট হলেও পানিবন্দি হয়ে থাকা যায়, কিন্তু বাড়ি ভেঙে গেলে তারমত কষ্ট হয়না। তিনি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পশ্চিম ইচলির মতিবার, মালেক, বাবলু, আনোয়ার, জোবেদা বলেন, ৩ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। উচুস্থানে কোন রকম রান্না এবং আত্বীয়র দেয়া খাবার ১ বেলা করে খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিনবিনা চরে মনতাজ, আইয়ুব, মাহাম্মদ, মান্নান জানান, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরো বাড়ি ও জমি বিলীন হয়ে যাবে। লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তার ইউনিয়নের ১ হাজারের বেশী পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত আছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি ফলে ভাঙন দেখা দেওয়ায় বিনবিনা চরে ৬ পরিবারের বাড়ি বিলীন হয়েছে। তিনি ভাঙন রোধসহ পানিবন্দির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের দাবি জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম জানান, পানিবন্দি পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুকুলে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।