গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের কৃষকেরা। তাই জেলা জুড়ে চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন চাষিরা। এবার জেলার ১৩ টি উপজেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে আমন ধানের, বিষয়টি জানিয়েছেন জেলা কৃষি অধিদপ্তর। রবিবার (১৮ জুলাই) হিলি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা জমিতে বিঘাপ্রতি ৩০ কেজি ডেপ ও ২০ কেজি পটাস সার ছিটিয়ে জমিতে কাঁদা তৈরি করছে। তবে আমন মৌসুমে গোবর সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কেন না গত বোরো মৌসুমে প্রতিটি ধানা জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর সার প্রয়োগ করা হয়েছিল। দেখা গেছে, জমিতে প্রচুর বর্ষার পানি জমা হয়েছে। বোরো মৌসুমের মতো পানি সেচের প্রয়োজন হয় না, এতে খরচের পরিমাণটাও অনেক কমে আসে। এক বিঘা জমিতে বীজ তৈরি করতে লাগে দুই কেজি ধান। এই দুই কেজি ধান বীজ তৈরি করে, আবার ঐবীজগুলো দোগাছি চারা তৈরি করে, জমিতে রোপণ করে। এক বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর তা থেকে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২১ মণ। গেলো আমন-ইরি মৌসুমে ধানের দাম পেয়েছে কৃষকেরা প্রতি মণ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাই ভাল দাম পাওয়ায় জেলার প্রতিটি ধানা জমিতে আমন ধান চাষ করছে ধানচাষিরা। হিলি জালালপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, আল্লাহ দিলে গত ইরি মৌসুমে মোর জমিতে ভাল ধান আবাদ হয়েছিল। দামও ভাল পাইছিনু। এবার মুই তিন বিঘা জমিত আমন ধানের চারা লাগামু। একবিঘা জমিতে চারা লাগা হয়ছে, বাঁকি দুই বিঘা লাগাতে আছে, সেলাও (সেগুলোতেও) হারা লাগামু। যদি এবারও ধানের দাম ভাল থাকে তাহলে ছোল-পল নিয়ে এ্যানা সুখোত থাকবা পারমু। বিরামপুর উপজেলার কেটরা গ্রামের কৃষক বাদল হোসেন বলেন, গত বোরো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়েছিল ১৮ বিঘা। ধানের দামের পাশাপাশি চাহিদাও ছিলো বেশি। তাই আমন মৌসুমে এবার আমি ২১ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করবো। ঘোড়াঘাটের পালশা গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, ইরি ধানের চেয়ে আমন ধান চাষ করতে অনেকটা খরচ কম লাগে, কেন না পানির জন্য বাড়তি কোন খরচ দিতে হয় না। বর্ষার পানিতেই আমন ধান চাষ হয়। এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করবো। বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সোন চন্দ্র পাল জানান, ধানের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকেরা আমন চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। উপজেলায় এবার প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করবে কৃষকেরা। তিনি আরও জানান, দেশে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও আমরা অফিস করছি এবং কৃষকদের সেবা দিচ্ছি। এছাড়াও আমিসহ কৃষি কর্মীরা প্রতিনিয়ত মাঠ পরিদর্শন করে যাচ্ছি এবং কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মোছাঃ মমতাজ সুলতানা জানান, উপজেলায় প্রায় ৬৫ ভাগ আমন ধান জমিতে রোপণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার ১২৬ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা আমন ধান চাষ করবেন। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান ২৪১ হেক্টর ও উফসি ধান ৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, চলতি আমন মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করছেন ধান চাষিরা। বর্তমান এই জেলায় কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রতিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ৮৭ লাখ টাকার ধান বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।