জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এলে লাখ লাখ রোগীকে সুস্থ-সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। এই প্রতিবেদক নিজেও ডায়েবেটিসক ও উচ্চ রক্ত চাপের মতো রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন। ‘সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে’- এমন ধারণা পাল্টে দিয়ে তিনি অনেক মানুষকে সুস্থ করেছেন। ওষুধ সারা জীবনের জন্য তবে রোগ মুক্তির জন্য গ্রহণ করতে হবে- চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন এক বিপ্লব ঘটানো চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরকে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস (এফডিএসআর) নোটিশ পাঠিয়েছে। গত ১ আগস্ট (রবিবার) ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ঠিকানায় একটি কুরিয়ার পাঠায় এফডিএসআর। কুরিয়ারে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ডা. জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট নিয়ে ভুল এবং অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই ডায়েটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক কাউন্সিলিং করেন না। বরং ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগীদের ব্যাপকভাবে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে ক্ষতি করছেন। তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনকে হেয় করে মন্তব্য করেছেন। করোনার টিকা নিয়ে ইমিউনোলজি বিষয়ক ভুল বক্তব্য দিয়েছেন।
সূত্রে প্রকাশ, ডা. জাহাঙ্গীর কবির করোনা ভ্যাকসিন তৈরির আগে মানুষের মনবল বৃদ্ধির জন্য, ভ্যাকসিন পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিভাবে সুস্থ থাকা যায় এ সম্পর্কে একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন। এতে তার কিছু বক্তব্য নিয়ে ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট ডা. জাহাঙ্গীর কবির দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব ভেরিফায়েড পেজে বলেন, করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমার অসাবধানতা বশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি। একইসঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ইদানিংকালে আমার একটি ভিডিও এবং দুটি পোস্ট নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত সুস্থ থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আমি একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলাম, সেখানে করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমার অসাবধানতা বশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি। একইসঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি। এরপরেও কয়েকজন সম্মানিত ডাক্তার আমাকে ভুল বুঝে সরাসরি আমার নাম উল্লেখ করে নানান রকম পোস্ট করেন। তন্মধ্যে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট আমি আমার পেজে শেয়ার করেছিলাম। এছাড়া অন্য একটি জনসচেতনতামূলক পোস্টে উদাহরণ স্বরুপ একটি প্রেসক্রিপশন শেয়ার করেছিলাম। ওই প্রেসক্রিপশনটি যিনি লিখেছিলেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি তার নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি প্রকাশ করিনি। তথাপি এই পোস্টটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তৎক্ষণাৎ দুটি পোস্টই ডিলিট করে দেই। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ডাক্তার সমাজের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসেবা করে যাচ্ছেন, মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন, এজন্য প্রত্যেক ডাক্তারই আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি কখনোই কাউকে অসম্মান করতে পারি না এবং আমি তা করতে চাইও না। তবুও আমার অনিচ্ছায় তা হয়ে থাকলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি কখনোই ঔষধ বিরোধী না, আমি সব সময় বলে এসেছি জরুরি চিকিৎসায় ঔষধ অপরিহার্য। তবে লাইফস্টাইল রোগগুলো লাইফিস্টাইল মডিফাই করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও আমার রোগীদের প্রয়োজনে ঔষধ লিখছি, সুতরাং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি যেন স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে পারেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যেসব রোগীরা সরাসরি আমার পরামর্শ নেন আমি তাদের নিয়মিত অবজারবেশনে রাখার চেষ্টা করি এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমার পরামর্শের নানান প্রভাব ও প্রতিকারের বিষয়ে আলোকপাত করে থাকি।
এ বিষয়ে এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের এসব বিভ্রান্তিকর লেখা, ভিডিও সবকিছু ইন্টারনেট থেকে অপসারণ করা না হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি এরই মধ্যে লিখিতভাবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) জানানো হয়েছে। এছাড়া, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবিরকে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
এফডিএসআরের ওই চিঠিতে সর্বশেষ বলা হয়েছে, ‘অতএব, এই পত্রপ্রাপ্তির এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি সকল মাধ্যম থেকে আপনার ভুল ও বিকৃত তথ্যাদি অপসারণ করবেন। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। অন্যথায়, আপনার বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, কারো সাথে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য হলেই আইনি নোটিশ পাঠানো গণতান্ত্রিক সমাজের রীতি নয়। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝির অবসানে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে।