সময় অত্যন্ত মূল্যবান। সময় আমাদের জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন। এত বেশি প্রয়োজন যে প্রায় সবাই আমরা মনে করি আরো একটু সময় যদি পাওয়া যেত তাহলে কাজটা সুন্দরভাবে করা যেত। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এই দুনিয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতঃপর এই নির্ধারিত সময়ের গ-ি পেরিয়ে আমাদের পরকালীন যাত্রায় পাড়ি জমাতে হবে। দুনিয়াতে মানুষের আগমন ও তাদের জীবনের লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান বাস্তবায়ন এবং তার ইবাদত বন্দেগি করা।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’ (সূরা আজ জারিয়াত-৫৬)। কিন্তু দুনিয়াতে আমাদের যেন ঝামেলার শেষ নেই। তাই সময়ের অপচয় রোধ করুন!
আমাদের যে সময় নেই তা নয়, আসলে আমাদের মনে হয় আমরা খুব ব্যস্ত। কিন্তু মূল্যবান সময়ের একটা বিরাট অংশ অপচয় হয়, এটাও ঠিক। আমাদের অজ্ঞাতসারেই অনেক সময় অহেতুক নষ্ট হয়ে যায়। এই নষ্ট সময়কে বাঁচাতে পারলে দিনে একাধিক কর্মঘণ্টা যোগ করা সম্ভব। যেমন আপনি সকালে আপনার গাড়িতে করে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল পড়ে গেল। এখন আপনি আপনার মূলবান সময়টুকু কিভাবে কাজে লাগাবেন। নিশ্চয়ই অহেতুক চিন্তাভাবনা করে নয়। বরং বুদ্ধিমানের কাজ হবে সেই সময়টাই তাওবা ইস্তিগফার করা। অথবা আপনি শুইয়ে আছেন, বসে আছেন অযথা হতাশায় ভুগছেন, এমতাবস্থায় আপনি মুখে মুখে উচ্চারণ করতে পারেন…‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি, অর্থ- আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার পড়বে কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে তার মতো বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে’ (সহিহ মুসলিম, জিকির ওয়া দোয়া পরিচ্ছেদ-২৬৯২)।
সুবহান আল্লাহ : হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: বলেন, আমরা রাসূল সা:-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি প্রত্যেক দিন এক হাজার নেকি অর্জন করতে সক্ষম কি? তন্মধ্যে একজন বললেন, আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কিভাবে এক হাজার নেকি অর্জন করবে? তখন রাসূল সা: বললেন, ১০০ বার সুবহানাল্লাহ বললে, তার জন্য এক হাজার নেকি লেখা হবে। অথবা তার এক হাজার পাপ মোচন করা হবে’ (মুসলিম, মিশকাত)।
আলহামদুলিল্লাহ : ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পাল্লাকে ভারী করে এবং এটি সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ: হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! সৃষ্টির মধ্য থেকে আপনার উম্মতের মধ্যকার এমন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান যে ব্যক্তি একদিন হলেও ইখলাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং সে এর ওপর মৃত্যুবরণ করেছে’ (মুসনাদে আহমদ)।
আল্লাহু আকবার : আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- ‘আমি সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতে এত বেশি পছন্দ করি যে, এগুলো বলা আমার কাছে পৃথিবীর বুকে সূর্যের নিচে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে বেশি প্রিয়’ (সহিহ মুসলিম-৪/২০৭২, নং-২৬৯৫)।
আস্তাগফিরুল্লাহ : রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘সু-সংবাদ তার জন্য, যার আমলনামায় অধিক ইস্তিগফার পাওয়া যাবে’ (ইবনে মাজাহ- ৩৮০৮)। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তিগফার করো। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন’ (সূরা হুদ, আয়াত-৩)।
ইস্তিগফার বালা-মসিবত দূর করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ইস্তিগফার করছে’ (সূরা আনফাল, আয়াত-৩৩)।
আল্লাহ তায়ালা ইস্তিগফারের মাধ্যমে, আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের আনুগত্য অনুযায়ী প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তিগফার করো। এরপর তার কাছে ফিরে যাও, তাহলে অধিক আনুগত্যশীলকে তার আনুগত্য মোতাবেক দান করবেন’ (সূরা হুদ, আয়াত-৩)।
আসুন আমরা সময়কে ভালো কাজে কাটাই। আশা করা যায় আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় সফলকাম হবো। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন’ (সূরা আনকাবুত-৪৫)।
নিজের এবং অপরের হকের বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব। অন্যের হক নষ্ট করলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কারণ বান্দার হক নষ্ট করলে সেটা আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং কিয়ামতের দিনও বান্দার হক সংক্রান্ত কোনো পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এটা একমাত্র ওই ব্যক্তিই ক্ষমা করতে পারে যার হক নষ্ট করা হয়েছে। আর কিয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে ক্ষমা করবে না। তাই কারো হক নষ্ট করব না আর ভুল করে নষ্ট করলেও তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো।