মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে শিশুদের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১

রাফির বয়স এক বছর পার হতে না হতেই দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলো। ওর বয়স এখন তিন বছর হতে চলল। এরইমধ্যে বোল ফুটেছে, হাঁটা শিখেছে চাকরিজীবী বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান রাফি। বয়সের সঙ্গে শিশুদের স্বভাবজাত দুষ্টুমিতে বাবা-মাকে মাতিয়েও রাখছে শিশুটি।
তবে এই শিশুটির মনোজাগতিক বিকাশ নিয়ে চিন্তিত তার বাবা-মা। করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাভাবিক কাজকর্মের প্রায়সব হয়ে পড়েছে ঘরবন্দি। দুর্যোগের এই সময়টা বড়দের যেমন তেমন কাটলেও ভালো যাচ্ছে না শিশুদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ; বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে তাদের খেলাধুলা বন্ধ; শিশুর সঙ্গে শিশুর সামাজিক মেলামেশার সুযোগ নেই ফলে রাফির বাবা-মা শিশুটির মনোবিকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। শুধু রাফিই নয়, মহামারীর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ শিশুরই ঘরের চার দেওয়ালে অনেকাংশে বন্দি সময় কাটছে। আর এমন পরিস্থিতি শিশুদের ওপর ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিজ্ঞানীরা। কারণ দীর্ঘসময় তারা ঘরবন্দি থাকায় শারীরিক দিকের সঙ্গে মানসিকভাবে তাদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাফির মা বলছিলেন, ঘুমের সময় বাদে তার ছেলের সময় কাটে মোবাইলফোন বা টিভিতে কার্টুন দেখে। হাঁটতে চলা শেখার পর থেকে শিশুটি আজকাল বাইরে যেতে গোঁ ধরে। তবে করোনার কারণে সেটি সম্ভব না হওয়ায় বাড়ির ছাদ পর্যন্ত নিয়ে তাকে কোনোভাবে বুঝ দেওয়া হয়।
জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনার সময় অন্য বয়সীরা কমবেশি ঘরের বাইরে গেলেও শিশুরা একেবারেই ঘরবন্দি। ফলে বাসায় থেকে টেলিভিশন, ইলেক্ট্রনিক্স নানা ডিভাইস অতিরিক্ত ব্যবহার করায় তারা নানা সমস্যার মুখে পড়ছে। তাদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি চোখের ওপর বাড়তি চাপের ফলে চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। স্মৃতিশক্তিও ধীরে ধীরে অবনমন হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।’
এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শিশুদের জন্য কতোটা ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনায় বাইরে যাওয়ার সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ থাকায় শিশুরা বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে না। সমবয়সীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাচ্ছে না। সামাজিকভাবে বেড়ে ওঠার যে সুযোগ ছিল সেদিকে কিন্তু প্রভাব ফেলছে এটি। আবার খেলাধুলা করতে না পারায় শারীরিক গঠনেও সমস্যার তৈরী হচ্ছে। এসব কারণে তাদের ওপর অবশ্যই মানসিক প্রভাব পড়ছে।’
এদিকে মহামারীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের দিকেও খুব একটা মনোযোগ নেই। এরা বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে মোবাইলফোন বা টিভি-কম্পিউটারে। এতে করে চোখের সমস্যাসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও দেখা দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও মা-বাবারা কিভাবে এড়াতে পারেন? অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘ঘরে থাকতে থাকতে শিশুরা যেন একগুঁয়ে না হয়ে যায়, তাদের স্বাভাবিক আচরণে যেন বড় কোনও পরিবর্তন না আসে সেজন্য মা-বাবাকে সময় দিতে হবে।’
‘বাসা বা বাড়ির মধ্যে যতটুকু সুযোগ আছে খেলাধুলায় বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। গল্প করা, যেসব কাজে আনন্দ পায় সেসবে ব্যস্ত রাখা। বেশি নয়, অল্প সময় হলেও অনলাইনে পড়শুনা বা শিক্ষনীয় কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। সমবসয়ীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলার সুযোগও করে দিতে হবে।’
এই মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ, শিশুরা সাধারণত বাবা-মাকে মডেল হিসেবে মনে করে। এই সময়টাতে তারা যেহেতু অন্য কাউকে কাছে পাচ্ছে না, তাই বাবা-মাকে বেশি করে সময় দিতে হবে। বাচ্চার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাকে শুনতে হবে। কর্মজীবীদের শিশু সন্তানদের দেখভাল করে রাজধানীর মিরপুরের ‘কেয়ার ফর চাইল্ড ডেভলপমেন্ট-সিসিডি। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা আশরাফুন নাহার ঢাকা টাইমসকে জানান, তাদের ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের সব কিছুর রুটিন আছে। করোনার আগে শিশুরা সেই রুটিন মেনে সব করত। সৈয়দা আশরাফুন নাহার বলেন, ‘কিন্তু এই মহামারী শুরু হলে শিশুদের সেই রুটিনে ছন্দপতন হয়েছে। লকডাউনের পরে যেসব শিশু সেন্টারে আসছে তাদের আচরণগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখেছি শিশুর ক্ষুধা কমে গেছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে, কম ঘুমাচ্ছে।’ এদিকে জীবিকার প্রয়োজনে পুরুষদের বাসার বাইরে যেতে হলেও চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া নারীরা দেন বাইরে যাচ্ছেন না। বিশেষ করে যেসব মায়েদের শিশুসন্তান আছে তাদের ওপরও বাচ্চা নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়ছে। নারীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে সন্তানদের নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট বন্ধ থাকায় কোথাও যাওয়া হয় না। করোনার কারণে আত্মীয়স্বজনদেরও বাড়িতে আসা-যাওয়া নেই। এসব কারণ বেশিরভাগ সময় বাচ্চা সামলাতে গিয়ে তারাও এক ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানী ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘মায়েদের ওপর চাপ থাকায় কখনও হয়তো তারা অকারণে রেগে যাচ্ছেন বা কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। কিন্তু সেটা সন্তানের বাবাদের ধৈর্যের সঙ্গে মেনে নিতে হবে। না হলে পরিবারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কথা হলো- আমরা কোন ধরনের বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেটা সবাইকে বুঝতে হবে।- ঢাকাটাইমস২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com