গত বছর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা কিনতে চুক্তি করে সরকার। আগাম অর্থও পরিশোধ করে। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের কথা থাকলেও প্রথম মাসে ৫০ লাখ ও ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ টিকার পর রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। সাত মাস পর আবার রফতানির অনুমতি দেওয়ায় অক্টোবরে ১০ লাখ টিকা সরবরাহ করে সেরাম। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসগুলোতেও বাকি টিকাও আসতে থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে নতুন করে আর টিকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে সেরামকে নতুন করে অর্ডার দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে না। আমাদের পাইপলাইনে যা আছে, তাতে জানুয়ারি পর্যন্ত সমস্যা হবে না।’ ভারতের কাছে টিকা সরবরাহের শিডিউল চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসে আমরা তাদের চালান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবোÍপ্রতি মাসে ঠিক কতগুলো টিকা তারা দেবে।’ প্রতি মাসে একটি করে কনসাইনমেন্ট আসার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। এখন আবার তা শুরু হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গেও তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। আমরা মনে করি সেটাও তারা সরবরাহ করবে।
সিনোফার্মা থেকে সংগ্রহ: চীনের সিনোফার্মা থেকে সাড়ে সাত কোটি টিকা সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এখন সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের যদি আরও টিকা লাগে তবে সিনোফার্মার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে তা সরবরাহের। যদি আমাদের প্রয়োজন অনুভূত হয় তবে যে চুক্তি করা হয়েছে সেটির অধীনে খুব স্বল্পতম সময়ের ভেতরে আমরা সংগ্রহ করতে পারব।’
নতুন চুক্তি: গত চার-পাঁচ মাস আগেও কোভিড টিকার বাজার পুরোপুরি বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এখন আর তা নেই। কারণ এখন অনেক সরবরাহকারী বাজারে এসেছে। সক্ষমতাও বেড়েছে। এ কারণে নভেম্বরে দামের ওপর একটি প্রভাব দেখা যাবে বলে আশা করেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, ‘যে টিকা আমাদের আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লাগবে, সেটার জন্য এখন চুক্তির দরকার নেই। আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করবো।’ তিনি বলেন, ‘যদি তারা ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারে, তা হলে নতুন করে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে দাম ও অন্যান্য শর্তের বিষয়ে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাই বেশি।’
উল্লেখ্য, গত মার্চে ভারতের সেরাম থেকে টিকার প্রাপ্যতা অনিয়মিত হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করলে এগিয়ে আসে চীন। চীনের সিনোফার্মার কাছ থেকে প্রথমে দেড় কোটি ও পরে আরও ছয় কোটিসহ মোট সাড়ে সাত কোটি টিকা সংগ্রহের চুক্তি করেছে সরকার। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স থেকে আরও ছয় কোটি টিকা পাওয়া যাবে বলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনার জন্য ২৬ কোটির বেশি টিকার প্রয়োজন হবে।