বিশ্বজুড়ে আবার বেড়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। একইসঙ্গে বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৬৪৩ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১০০ জন। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৪ জনে। একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ২৭ হাজার ২৫ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ২০ লাখ ৯৪ হাজার ২০ জনে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক মৃত্যুতে এরপরই রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন-ব্রাজিল-মেক্সিকো। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৯৪ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৩৩৩ জন।
অন্যদিকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২৩৯ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৫৮ জন। এছাড়া গত একদিনে যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৩২৯ জন এবং মারা গেছেন ২১৪ জন।
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬৪ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৫৭ জন। করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন এবং নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৩৬ জন।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে ১৩৫ জন, তুরস্কে ২০৩ জন, ইউক্রেনে ৮১৫ জন এবং পোল্যান্ডে ২৬৯ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মেক্সিকোতে মারা গেছেন ২৯৯ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে সংস্থাটি।
রাশিয়ায় একদিনে রেকর্ড মৃত্যু: করোনা ভাইরাসে রাশিয়ায় একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়েছে। বুধবার বলা হয়েছে, সেখানে ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১২৩৯ জনের।হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক অক্সিজেন সংকট। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকা পরিস্থিতিতে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, যে পরিমাণ অক্সিজেনের মজুদ আছে, তা সর্বোচ্চ দু’দিন চলতে পারে। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন উপপ্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাশিয়ায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য দেশজুড়ে এক সপ্তাহের জন্য কর্মক্ষেত্রে শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। বিভিন্ন অঞ্চলের সেই লকডাউন প্রত্যাহার করার দু’দিন পরেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড জানানো হলো। বুধবার সরকারি এক মিটিংয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা বলেছেন- এখন আর আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারছিনা যে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং সংক্রমণের হার কমে এসেছে। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বলেছিলেন ৩০শে অক্টোবর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়াজুড়ে করোনা মহামারির গতি কমিয়ে আনার জন্য শাটডাউন দেয়া হয়েছিল।
ওদিকে উপপ্রধানমন্ত্রী গোলিকোভার বক্তব্য রাশিয়ার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশটিতে অক্সিজেন সংকট কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সে বিষয়ে বুধবার পার্লামেন্টের সামনে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুরাশকো। তিনি বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে হাসপাতালগুলোতে যে অক্সিজেন আছে তাতে সর্বোচ্চ দুই দিন অথবা তারও কম সময়ে চলতে পারে। এ সময়ের মধ্যে অবশ্যই হাসপাতালগুলোকে নতুন করে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে হবে। একই সময়ে তিনি আরো বলেন, কিছু অঞ্চলে এরইমধ্যে সংক্রমণের হার কমে আসার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হলো করোনা ভাইরাসের টিকা ফলপ্রসূ হচ্ছে। রাশিয়ায় যাদেরকে টিকা দেয়ার হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ মানুষ করোনাই আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাশিয়ার ৬ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ কে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ওদিকে উপ-প্রধানমন্ত্রী গোলিকভা বলেছেনম এখনো কমপক্ষে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে।প্রায় ৯০ লাখ মানুষকে দিতে হবে বুস্টার ডোজ। ওদিকে সরকারের করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্স রিপোর্ট করেছে যে, ২৪ঘন্টায় পুরো রাশিয়ায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৫৮ জন। এরমধ্যে রাজধানী মস্কোতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৯২৭।
ফ্রান্সে ৫ম ঢেউ শুরু: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে ফ্রান্স। বুধবার এ সর্তকতা দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর ফলে দেশজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। যারা আশা করেছিলেন অবিলম্বে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন, তাদের মধ্যেও এখন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, এখন শীতকাল। উত্তর গোলার্ধের এসব দেশে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে।
এ সময়ে এমনিতেই ঠা-াজনিত নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তার ওপর শক্তিশালী করোনা ভাইরাস, এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থাবা বিস্তার করছে। ফলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন সতর্কতায় চারদিকে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় টিএফ১ টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে, তার দেশ এখন করোনাভাইরাস মহামারি পঞ্চম ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো সেখানকার অবস্থা। তিনি আরো যোগ করেন- করোনাভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী বেশ কিছু দেশে করোনাভাইরাস মহামারি পঞ্চম ঢেউ শুরু হয়েছে।ফ্রান্সেও আমরা যে পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি তা ওই পঞ্চম ঢেউয়ের মতো।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে সেখানে ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৮৮৩ জন। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের উপরে। মধ্য অক্টোবরের পর দেশটিতে সাপ্তাহিক হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা হিসেবে দুই অঙ্ক অতিক্রম করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এ সপ্তাহের শুরুতে সর্তকতা দিয়ে বলেছেন, করোনা সংক্রমণের হার তার দেশে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৬৫ বছর বা তার উপরে যাদের বয়স, তাদের কোনো রেস্তোরাঁয় যেতে হলে, কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হলে অথবা আন্তঃনগর ট্রেন চড়তে হলে প্রমাণ দেখাতে হবে যে তিনি বুস্টার ডোজ টিকা নিয়েছেন।