যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সভায়’ বাংলাদেশ না থাকাটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৭ নভেম্বর উপলক্ষে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখেছি ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটা গণতন্ত্র সভা ডেকেছেন, সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই’। আজকে কত বড় দুঃখ-লজ্জার যে, ১০০ টা দেশকে ডেকেছেন, বাংলাদেশ নেই। দেশ কোথায় গেছে, আমরা গণতান্ত্রিক দেশ। তিনি বলেন, দেশটা যে গণতান্ত্রিক দেশ ছিল, আমরা যার জন্য যুদ্ধ করেছি, লড়াই করেছি, যে জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (কেয়ারটেকার সরকার) মতো একটা ইউনিক সিস্টেম এনেছিলাম। যার মাধ্যমে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারতাম। সেই দেশটাকে আজ পরিচিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। এরচেয়ে লজ্জার ও দুর্ভাগ্যের ব্যাপার কিছুই হতে পারে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার এতই ভিন্ডিকটিভ যে, তারা অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়নি। এতই প্রতিহিংসা। এ প্রতিহিংসার আগুনে গোটা দেশকে ছারখার করে দিয়েছে। কথায় আছে নাÍরাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য রয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে একটা রাজকীয় অবস্থান তৈরি করেছে, কিন্তু কেনো? আপনাদের উদ্দেশ্য অন্যরকম। আপনারা এটাকে একটা পারমানেন্ট ইস্যু হিসেবে ফায়দা লুটতে চান।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানে কোনো ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেয়নি। কারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাঁধা দিচ্ছে? দেখেন এ সরকারের বন্ধু ভারত, চীন, রাশিয়া। এতো বেশি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না কেন?।
জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামিক পার্টি আবুল কাশেম, জাগপার আওলাদ হোসেন শিল্পী প্রমুখ বক্তব্য দেন।এখন কোনো বিচারপতিই সত্য রায় দিতে পারে না : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে ন্যায় বিচার আজ ভূলন্ঠিত। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। ন্যায় বিচার নেই। সত্য বলার অপরাধে প্রধান বিচারপতিকে সাজা দেয়া হলো। এদেশে সম্মানিত কোনো ব্যক্তিরই সম্মান নেই। এখন কোনো বিচারপতিই সত্য রায় দিতে পারে না। কারণ, সত্য বললে বা সঠিক রায় দিলে তাদেরকে এসকে সিনহার পরিনতি ভোগ করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি আয়োজিত দআজকের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে দাবি করলেও তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। বিএনপির পঞ্চাশোর্ধ বয়সের বেশিরভাগ নেতাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এদলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর আ’লীগের যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা তারা ভারতে পালিয়ে গেলেন। স্বাধীনতার পর এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ৭২ থেকে ৭৫ সালে পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিলীন করে দিয়েছে। বাকশাল কায়েম করে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছিলো।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার সম্বলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। এরপর দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়েছিল। আজ আবারও সেই ৭৫-এর মতো বাকশাল তৈরীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গত একযুগ ধরে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সংকট অনেক গভীরে। স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী আজ কারাগারে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, হত্যা করা হয়েছে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। এথেকে মুক্তি পেতে হলে দেশপ্রেমিক সকল দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ ও জাতিকে এই ফ্যাসিবাদ সরকার থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে কোথায়ও নিরাপত্তা নেই। ডিজিটাল আইনে মামলা করে রাষ্ট্র ও সমাজে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের বোধশক্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা আজ ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। এরজন্য সকলকেই আন্দোলন প্রস্তুতি নিতে হবে, ত্যাগ শিকারের জন্য তৈরী থাকতে হবে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের পরিচালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক, বিএনপির সাংগঠনিক শ্যামা ওবায়েদ, মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক কর্ণেল অব. জয়নুল আবেদীন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।