শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

ভয়কে জয় করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে শেরপুরের মানিক

জাহিদুল খান সৌরভ শেরপুর :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

পুরো নাম মোঃ মানিক মিয়া। বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশের ঘরে। দেখতে সমাজের অন্য ছেলেদের মতন হলেও মানিক অটিজমে আক্রান্ত। ছোটবেলা থেকেই মানিক সবকিছুতে ভয় পায়। কথা বলে কম, কারও সাথে তেমন মিশেও না। করেনা খেলাধূলাও। মনে রাখতে পারে না অনেক কিছু। কিন্তু সব বাধা ও বিপত্তিকে পেছনে ফেলে মানিক এবার অংশগ্রহন করেছে এসএসসি পরীক্ষায়। মানিক শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তারাগড় নামাপাড়া গ্রামের মো. জয়নাল মিয়া ও মাজেদা বেগমের বড় ছেলে। পরিবারে তার এক ভাই ও এক বোন। অন্য সাধারন পরীক্ষার্থীদের মতো সে নিজেই খাতায় উত্তর লিখছে। রবিবার (২১ নভেম্বর) শেরপুরের আফছর আলী আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে এমন চিত্র। মানিকের বাবা জয়নাল মিয়া বলেন, তার জন্ম ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি। তিন বছর বয়সেও মানিক হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারেনি। অল্প অল্প কথা বলত। সেটাও ছিল অনেকটা অস্পষ্ট। শেরপুর সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় মানিককে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে মানিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়। আস্তে আস্তে দাঁড়াতে ও হাঁটতে শিখে সে। এরপর সাত বছর বয়সে তাকে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করি। সেখানে ভাল ফলাফল না করায় মানিককে স্থানীয় আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি করি। মানিক স্কুলে কারও সাথে মিশতো না। কথা বলতো না। স্যার ম্যাডামরা হাজিরা ডাকলে উত্তর দিত না। তাকে নিয়ে আশপাশের অনেকেই অনেক রকম কথা বলতো। সব পেছনে ফেলে আমরা মানিককে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। আমরা কতদিন বাঁচবো। একসময় তো মানিককে কিছু একটা করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার থাকে। মানিক যেহেতু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তাই সরকারের পক্ষ থেকে তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। মানিকের মা মাজেদা বেগম জানান, মানিকের বাবার অনেক আগ্রহ সে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। অনেকে মানিককে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেন। আবার অনেকে বলেন পড়াশোনা করে কি হবে? মানিক তো কিছু মনে রাখতে পারে না। তার বুদ্ধি কম।  তাই সব বাদ দিয়ে তাকে বিয়ে করিয়ে দাও। না হয় অন্য কোন কাজ কর্মে পাঠাও। কথা বলার এক পর্যায়ে মাজেদা বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, মানিককে যখন আমরা বিদ্যালয়ে পাঠাই। তখন তাকে কেউ ধমক দিয়ে বই, খাতা, কলম চাইলে দিয়ে দিতো। আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি মানিক একদিন সুস্থ হবে। চাকরি করে মা বাবার কষ্ট দূর করবে। পুঁটিজানা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, মানিক তার বাবা আমাদের বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে ভর্তি করান। মানিক ও তার ছোট ভাই জানিক একই শ্রেণিতে ভর্তি হয়। মানিক দেখতে স্বাভাবিক হলেও তার মেধা ও বুদ্ধি কম ছিল। সে পড়াশোনায় এতটা পারদর্শী ছিল না বুঝতো কম। কিন্তু মানিকের ছেলে অদম্য ইচ্ছাশক্তি। সে একদিনও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতো না। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার পর পাকুরিয়া ইউনিয়নের পুঁটিজানা উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। ২০১৮ সালে জিপিএ-২.৭৫ পেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় পাস করে। আর এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকেই মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মানিক। প্রথমে তার সহপাঠীরা তাকে নিয়ে মজা করলেও পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগীতায় মানিক ভালভাবে স্কুল জীবন শেষ করে। আফছর আলী আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জানান,প্রতিবন্ধী যে কোন শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় বাড়তি সুি^ধা দেওয়া হয়। মানিককেও প্রতি পরীক্ষায় নির্ধারিত সময় থেকে বাড়তি ২০ মিনিট দেওয়া হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com