মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় এক দফা দুই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে গজারিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ইউনানি চিকিৎসকদের নামের আগে ডাক্তার লেখার অধিকারসহ ডিজি হেলথ থেকে রেজিষ্ট্রেশন এর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইউনানি হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের গজারিয়া শাখার ছাত্র অধিকার সংগঠন। গত বুধবার ২৪ নভেম্বর সকাল ১১টায় গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাশে হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয় গেইটের সামনে মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা। সম্প্রতি ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার বেআইনি ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এক দফা দুই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাইকোর্টের রায়ের প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করে ডাক্তার লেখার মৌলিক অধিকার ও রায়ের পর্যবেক্ষণে ইউনানি, হোমিওপ্যাথির জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন, ডিজি হেলথ থেকে রেজিষ্ট্রেশন চাই। ডিএইচএমএস কনডেন্স কোর্স চালু মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ ইউনানী হোমিওপ্যাথি সেবা নেন। ইউনানী হোমিওপ্যাথিক বোর্ডসহ হোমিওপ্যাথিক সমাজের কোনো চিকিৎসককে পক্ষ বা বিপক্ষ করেনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ডাকা হয়নি। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই আদেশ দিয়েছেন, যা হোমিওপ্যাথিক আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’ বক্তারা আরও বলেন, ‘হোমিওপ্যাথিক বিষয়ে আলাদা আইন আছে। এর নাম, দ্যা বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অরডিন্যান্স ১৯৮৩। এ আইনের ৩৩-এর এ ধারা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর সেকশন ২ অনুসারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করা বৈধ।’ গজারিয়ায় শাখার হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ইমাম হাসান, রাশেদুজ্জামান শাহিন, নাজমুল সাকিব শান্ত, আল আমিন, তানভির, এরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছর ৬ মাস কলেজে লেখাপড়া করে সরকারি সকল ফিস পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নামের আগে কেন ডাক্তার লিখতে পারব না? পেশাগত জীবনে আমরা আমাদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে চাই।’ গজারিয়ায় শাখার হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টারে বিক্ষোভকারী মোঃ আসাদুল হক শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মহাপরিচালক থেকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয থেকে তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয় না। এতে চাকারি লাভের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক শিক্ষার্থীদের ডাক্তার পদবি ব্যবহারের ঘোষণা থাকলেও তারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না। এই অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য তাদের দুই দফা দাবি মেনে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক থেকে নিবন্ধনের পাশাপাশি ডাক্তার পদবি ব্যবহার করা অনুমতি দিতে হবে। শিক্ষার্থী রাজ্জাক খান বলেন, ‘ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে ইউনানী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকেরা আইনগতভাবে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহারের অধিকার রাখেন। আমি আশা করি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের মাধ্যমে আমাদের অধিকার ফিরে আসবে।’ মানববন্ধন শেষে গজারিয়া শাখার ইউনানী হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় সাংবাদিক দের সাথে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কর্মকর্তা বৃন্দ অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত), ট্রেজারার, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মোয়াজ্জম হোসেন রেজিস্ট্রার, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, মোঃ নূরুল হুদা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের বলেন, আইনের প্রক্রিয়া এবং বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন গত ১৪ আগস্ট বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭১ পৃষ্ঠার এক রায়ে বলা হয়েছে, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার (উৎ.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তারিখের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ (অষঃবৎহধঃরাব গবফরপধষ ঈধৎব) শীর্ষক অপারেশনাল প্লানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নামের পূর্বে ডাক্তার (ডা.) পদবি সংযোজনের অনুমতি প্রদান করেছে,। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে তাদের নামের পূর্বে পদবি হিসেবে ডাক্তার (উৎ.) ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করাও বেআইনি। হোমিওপ্যাথি বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জারিকৃত ‘দি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাক্টিশনার্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩’ এর চ্যাপ্টার ৬ এ অন্তর্ভুক্ত ধারা ৩৩(এ) মোতাবেক বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড থেকে সাটিফিকেটধারী চিকিৎসকগণ নামের পূর্বে ডাক্তার লিখতে পারবেন।