মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও কমেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১

করোনার সংক্রমণ কমেছে

প্রথমে আফ্রিকা, এরপর ইউরোপ, আমেরিকা হয়ে এবার বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতেও শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। গত ৮ নভেম্বর প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্টটি এরই মধ্যে ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানো যায়নি, ওমিক্রনও ঠেকানো যাবে না। সচেতন না হলে বাংলাদেশেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা উদ্বেগজনক হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি। মারাত্মক পরিবর্তিত করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত দক্ষিণ আফ্রিকায় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। গত ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিক্যাবল ডিজেসেস (এনআইসিডি) জানায়, দেশটিতে বিগত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৮ হাজার ৫৬১ জন সংক্রমিত হয়েছে। দেশটিতে এখন সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকান সংস্থাটি জানিয়েছে, গত মাসে জিনগতভাবে বিশ্লেষণ করা নমুনার ৭৪ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এক সপ্তাহ আগে ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। যে নমুনায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায় তা দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল গৌতেং প্রদেশ থেকে ৮ নভেম্বর সংগ্রহ করা। গত মঙ্গলবারের তুলনায় দেশটিতে বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এক প্রাথমিক গবেষণায় দেখেছেন, ডেলটা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিনগুণ বেশি। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, আগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ওমিক্রনের। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হয়েছে অনলাইনে, তবে এর রিভিউ এখনও সম্পন্ন হয়নি। বাংলাদেশে ওমিক্রন সতর্কতায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ওমিক্রন নিয়ে বৈঠকের পর এ বিষয়ে ১৫ নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর অধিদফতর দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওমিক্রন শনাক্ত দেশ থেকে প্রবাসীদের এই মুহূর্তে দেশে না ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু এতসব পদক্ষেপ ক্ষেত্রেও দেশের সবচেয়ে কাছের দেশে যখন অতিসংক্রমণশীল ওমিক্রন শনাক্ত হয়, তখন সেটা রীতিমতো শঙ্কার বিষয়। কেননা, এর আগে ভারত থেকে আসা ডেল্টার কারণেই গত মধ্য জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এর ভয়ংকর বিধ্বংসী রূপ দেখতে হয়েছে দেশকে। এই সময়ের মধ্যেই করোনা মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ওঠে ৩২ শতাংশে। দেশে গত ২৪ মে থেকে জানা যায়, সীমান্তবর্তী সাত এলাকায় বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। তার আগেই বেপরোয়া ঈদযাত্রায় করোনার সংক্রমণ বাড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অনুমান সঠিক প্রমাণ করেছে ঈদের পরপরই সংক্রমণের নতুন মাত্রা। দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এরমধ্যে গত মে মাসে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে সাত জেলায়। এই জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরপর সেখান থেকে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পরে ডেল্টা।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ডেল্টা ঠেকানো যায়নি, এবার ওমিক্রনও ঠেকানো যাবে না। সেটা আজ কিংবা কাল অবশ্যই বাংলাদেশে আসবে। আর এজন্য সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। এবারে যেন ডেল্টার মতো পদক্ষেপে গাফিলতি যেন না হয় এবং দেশের ভেতরে যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হয় সেই বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। ডেল্টার মতো ওমিক্রন বাংলাদেশের কতটা কাছে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আমাদের এখন ‘রিস্ক বেসইড অ্যাপ্রোচ’ অর্থাৎ ঝুঁকি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এখন যেসব দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এর প্রতিবেশী দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে সেসব দেশ, যাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি বর্ডার নেই, সেসব দেশ থেকে কেউ এলে তাদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। কিন্তু যেসব দেশে একজন দুই জন করে শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশ থেকে এলে হয় হোম কোয়ারেন্টিন অথবা তিন থেকে সাত দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। এরপর তাদের করোনা টেস্ট করে নেগেটিভ হলে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টিন কি বাংলাদেশের মতো দেশে সম্ভব কিনা প্রশ্নে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মনিটরিং না করলে হোম কোয়ারেন্টিন আসলে কোনও দেশেই কার্যকর হয় না। তবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নাই, এমন দেশ থেকে এলে তাদের কোনও একটা বিধিনিষেধের মধ্যে রাখা উচিত। এখন দেখা যাক সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, বলেন ডা. মুশতাক হোসেন।
ভারতে শনাক্ত হবার ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারত এখন সেই ক্যাটাগরিতে পড়বে যেখানে ‘স্পোরাডিক ট্রান্সমিন অব ওমিক্রন’ (বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমিত হওয়া)। একটা ক্রাইটেরিয়া ছাড়া তো কোনও স্পেশাল ব্যবস্থা নিতে পারি না, স্পেশাল রিলাক্সও করতে পারি না, স্পেশাল কড়াকড়িও নিতে পারি না।
তবে এ বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক মোটিভেশন দরকার রয়েছে জানিয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যেহেতু কর্ণাটকে ধরা পড়েছে রোগী, তাই ওখান থেকে কেউ এলে তাদের অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। সেই সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ডেল্টাকে ঠেকানো যায়নি, ওমিক্রনও ঠেকানো যাবে না। ভারতে শনাক্ত হওয়া মানে আমরা ওমিক্রনের খুব কাছাকাছি।
ভারতে যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়, তখন একে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু ঠেকানো যায়নি। ‘যদিও তখন পদক্ষেপ গ্রহণে শিথিলতা ছিল কিংবা যেভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল, সেটা হয়নি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সঙ্গে বৈধ উপায়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভারতে অবৈধ কিংবা ছোট ছোট অনেক পথ রয়েছে, যেখান দিয়ে দুই দেশের মানুষের যাতায়াত রয়েছে। আবার বর্ডার সিল করার মধ্যেও তখন অনেক ঘাটতি ছিল। সেটা যদি এবার নাও হয়, তাহলে হয়তো কিছুটা ডিলে হবে, কিন্তু ওমিক্রন ঠেকানো যাবে না, বলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ‘সেই সঙ্গে পাসপোর্ট ছাড়া মানুষের যাওয়া ঠেকানো যাবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশে ওমিক্রন আসবেই। বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারত, ভারতে আসা মানেই বাংলাদেশে আসা, এটা এখন কেবল ম্যাটার অব উইক’, বলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com