অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় সিন্ডিকেটের ৭৬তম সভা শেষে কুয়েটের ভিসি অধ্যাপক কাজী সাজ্জাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চত করেছেন। এর আগে বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা তদন্ত ছাড়া কাউকে বহিষ্কার না করার দাবি তুলেছেন। গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন। তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন।
জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি সরকারি চাকরি পাওয়ার পরপরই নতুন কমিটি আসার প্রাকমুহূর্তে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ভাগ হয়ে পড়েছে কয়েকটি উপদলে। এর ভেতর একটি প্রভাবশালী উপদল বর্তমান কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স¤প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই প্যানেলের সদস্যরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি ক্যাডার গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড. সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জন, সৎ ও মেধাবী শিক্ষক। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷ ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ২০২০ সালে অধ্যাপক পদোন্নতি পান৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
পড়ালেখায় মন দেওয়া দায় কুবি শিক্ষার্থীদের: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আশপাশে শব্দদূষণের কারণে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিভিন্ন পার্ক ও রিসোর্ট, স্থানীয়দের ডিজে পার্টি ও অনুষ্ঠানে দিনরাত উচ্চ শব্দে গান-বাজনার কারণে আবাসিক হল ও বিভিন্ন ছাত্রাবাসে পড়ালেখা ও ঘুমের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘœ ঘটছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’। নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল ও আবাসিক এলাকায় ৪৫-৫৫ ডেসিবল। তবে এই নির্ধারিত মাত্রা মানছেন না স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, প্রতœতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরীক্ষা চলাকালে পার্শ্ববর্তী পার্ক থেকে আসা গানের শব্দে বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে টানা কয়েকদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল-সংলগ্ন স্থানীয়দের এক অনুষ্ঠানে ডিজে পার্টির উচ্চ শব্দে ভোগান্তির শিকার হন শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহাগ মনি বলেন, আশপাশের এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। এতে আমরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারি না। ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার পরীক্ষা চলাকালীন এতো জোরে সাউন্ড হচ্ছিল যে হলে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছিলো। আমরা জানালাগুলো বন্ধ করে শব্দ কমানোর চেষ্টা করেছি। বেশ সমস্যাই হয়েছে আমাদের।’ এ বিষয়ে কুবি-সংলগ্ন স্বপ্নচূড়া পার্কের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার মধ্যে গান বাজানো হয়েছে বিষয়টা জেনে আমরা লজ্জিত। আমরা পর্যটকদের জানিয়েছি যেন সাউন্ড কমিয়ে দেয়। সামনে থেকে যথাসম্ভব সাউন্ড কমিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিষয়টা জেনেছি। কর্তৃপক্ষকে জানাবো যেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। গতবারও রিসোর্টগুলোকে আমরা এ বিষয়ে নোটিশ করেছিলাম। এখন আবার নোটিশ করতে হবে মনে হচ্ছে।’