মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

মালাকুল মাউত

মো: আবদুল গনী শিব্বীর:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ, সব মাখলুকাত, ইহলৌকিক জীবনের সব উপাদান এমনকি পারলৌকিক জীবনের সব কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিজগতের সব কিছুই মাখলুক আর সব মাখলুকের খালিক একমাত্র তিনিই। আর তিনিই হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শুধু তাঁর ইবাদত বন্দেগির জন্য জিন ও ইনসান সৃষ্টি করেছেন। জিন ও ইনসান তাঁরই বাধ্যগত হবে তাঁরই ইবাদত বন্দেগি করবে এটাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতাশা। পৃথিবীর সব প্রাণীর হায়াত সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত। কোনো প্রাণীই তাঁর ইচ্ছার বাইরে জন্ম নেয়নি, আবার কোনো প্রাণীই তাঁর ইচ্ছার বাইরে মৃত্যুবরণও করবে না। তিনি প্রাণীদেহে রূহ তথা প্রাণের সঞ্চার করেন আবার তিনি নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতার মাধ্যমে প্রাণীদেহের ‘রূহ’ তথা প্রাণবায়ু কবজ করেন। রূহ কবজকারী ফেরেশতাকে ‘মালাকুল মাউত’ বলে। মালাকুল মাউত নামের সম্মানিত এ ফেরেশতা মহান প্রভু আল্লাহপাকের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দেশিত অবস্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়েই রূহ কবজ করেন। মালাকুল মাউত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। যারা দুনিয়ার উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দেয় কেবল তাঁরাই মালাকুল মাউতের কথা শুনে আঁৎকে উঠে, ভয়ে হৃদয় প্রকম্পিত হয়, তাঁরা আল্লাহপাকের রহমত প্রত্যাশা করে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে মালাকুল মাউত প্রসঙ্গ : প্রাণীদেহের ‘রূহ কবজ’ করার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হলেন ‘মালাকুল মাউত’। কিন্তু তাঁর সহযোগী বহু ফেরেশতা আছেন। তাঁরা মালাকুল মাউতের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, তোমাদের জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফিরে যাবে’ (সূরা সাজদাহ, আয়াত-৩২)। আল্লাহপাক আরো বলেন, ‘যারা নিজেদের ওপর জুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতারা বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে’? তারা বলে, ‘দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম’। তারা বলে, ‘আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করতে?’ ‘এদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম, আর এটা কত মন্দ আবাস! (সূরা নিসা, আয়াত-৯৭)।
তিনি আরো বলেন, ‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখম-লে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের দশা কেমন হবে’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত-২৭)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘বলো (হে নবী) তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যাবে’ (সূরা আস সাজদা, আয়াত-১১)। ‘তিনিই স্বীয় বান্দাদের ওপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোনো ত্রুটি করে না’ (সূরা আনয়াম, আয়াত-৬১)। উল্লিখিত আয়াতগুলোর আলোকে বোঝা যায়, প্রাণিজগতে ‘রূহ কবজকারী’ মালাকুল মাউতের সাথে বহু ফেরেশতা রয়েছেন। মালাকুল মাউত সম্পর্কিত বিষয়টি স্পষ্টভাবে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- প্রখ্যাত সাহাবি বারা ইবনে আযিব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কবরে মৃত ব্যক্তির (মুমিনের) নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ (ফেরেশতারা) তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? সে উত্তরে বলে, আমার রব হলেন আল্লাহ। তারপর মালায়িকাহ জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কী? সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। আবার মালায়িকাহ জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? সে বলে, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা:। তারপর মালায়িকাহ তাকে জিজ্ঞেস করেন, এ কথা তোমাকে কে বলেছে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি।’ তিনি (সা:) বলেছেন, ‘এটাই হলো আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর ব্যাখ্যা- ‘আল্লাহ তায়ালা সেসব লোকদেরকে (দ্বীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে… আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা ইবরাহিম ১৪ : ২৭।
অতঃপর রাসূল সা: বলেন, ‘আকাশম-লী থেকে একজন আহ্বানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে।’ রাসূল সা: বলেছেন, ‘ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষসীমা পর্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে।
অতঃপর রাসূল সা: কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি তো কিছুই জানি না। তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে, তোমার দ্বীন কী? সে বলে, হায়! হায়! তাও তো আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে, হায়! হায়! এটাও তো জানি না। তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলে, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।’ রাসূল সা: বলেন, ‘তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপর দিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চিৎকারের শব্দ) পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত জিন ও মানুষ ছাড়া সব মাখলুকই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ ফেরত দেয়া হবে। এভাবে অনবরত চলতে থাকবে (সুনানে আবি দাউদ-৪৭৫৩, সুনানে আহমাদ-১৮০৬৩)। লেখক: মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com